Sunday, November 3, 2024
E-Commarce

প্রথাগত ই-কমার্স কোম্পানির আড়ালের চিত্র

প্রথাগত ই-কমার্স কোম্পানির আড়ালের চিত্র

      দেশের বেশ পুরোনো ও পরিচিত এক ই-কমার্স কোম্পানিতে বুয়া-ক্লিনাররা পুলিশ নিয়ে গেছেন বেতন আদায় করতে। এটা গত কয়েকদিন আগের ঘটনা। বিনিয়োগকারীরা ই-কমার্সের পুরোধা এক কোম্পানিতে উদ্যোক্তাকে নাজেহাল করে আসেন এই জন্য যে, তাদের বিনিয়োগের হিসাব ঠিকঠাক দিতে না পারার জন্য। 

আসলে দেশের প্রায় সবগুলো ‘প্রথাগত’ ই-কমার্স কোম্পানির আড়ালের চিত্র কমবেশি এমনটাই। প্রায় ৮ বছর চলে দেশের অন্যতম ই-কমার্স কোম্পানি বাগডুম নীরবেই বন্ধ হয়ে গেছে। দেশে ই-কমার্সের অন্যতম পথিকৃৎ আজকের ডিল ৮ বছরে এসে পারছে না শুধু বন্ধ ঘোষণা করতে। শুরুর আরেক কোম্পানি প্রিয়শপ সারভাইভিং, খড়কুটো আঁকড়ে পথ খুঁজছে টিকে থাকার। এডিসন গ্রুপের মতো কোম্পানির পিকাবু প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছিলো, এখন নামকাওয়াস্তে।  চালডালের অবস্থা এমন যে, সিরিজ পার করে শেষে তার এখন সিড ফান্ড নিতে হয়। সিন্দাবাদ, আছে এই যা। ডেলিগ্রাম বন্ধই বলা যায়। এসেছিলো কিকসা, সেই কবে নাই হয়ে গেছে। 

আপনার মনে হচ্ছে, এসব কোম্পানির উদ্যোক্তারা হুজুগে এসেছেন বা কম যোগ্যতা সম্পন্ন ! একদমই তা না। বরং এসব কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ম্যাক্সিমামই বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের একেকজন অত্যন্ত দক্ষ, অভিজ্ঞ, সফল সংগঠক, ইনোভেটিভ, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সুপরিচিত এবং পলিসি পর্যায়ে ওয়েল কানেক্টেড। তাঁরা তাদের ই-কমার্স উদ্যোগগুলোতে দফায় দফায় বিনিয়োগ পেয়েছেন, প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক মিডিয়া সাপোর্ট পেয়েছেন । শেষ পর্যন্ত লড়ে গেছেন বা লড়ে যাচ্ছেন।

এতোটা সময়, এতো কিছুর পরও দেশের ই-কমার্স খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো একে একে ডুবে যাচ্ছে কেনো ? এই ৮ বছর যাত্রায় দেশের ‘প্রথাগত’ কোন ই-কমার্স একটুখানি সফল ? এ খাত নিয়ে কোন উদ্যোক্তা স্বস্তিতে ?দেশীয় কেউ এই খাতে ইউনিকর্ন হওয়ার মুভমেন্টে ন্যায্যতা কেনো পায় না। না হলে কেনোই বা এমন পরিস্থিতি ?

     এর খোঁজ অবশ্য হাল আমলের ভাইরাল ‘চোথা রিপোর্টিংয়ে’ মিলবে না। তথ্য ব্যবসাকে পাশে রেখে তথ্যসেবার মনোভাব নিয়ে কেউ দেশের ই-কমার্সের জন্মের সঙ্গে হেঁটে আসলে কিছুটা দৃশ্যপটে আসতে পারে।

আসেন, একটু স্মৃতিচারণ করি:

ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা যখন হচ্ছিলো তখন দেশের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষায় দেশে বিদেশিদের শতভাগ বিনিয়োগের (এফডিআই) নীতির তীব্র আপত্তি তুলেছিলো বিসিএস, বেসিস, ই-ক্যাব ও বাক্যসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রভাবশালী কয়েকটি সংগঠন। মিডিয়ায় ব্যাপক আওয়াজও উঠলো। ‘ডিজিটাল কমার্স বা ই-কমার্স খাতে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি কোম্পানি ও অনুরূপ বিদেশি কোম্পানি ৫১:৪৯ ইক্যুইটি ভিত্তিক মালিকানা ব্যবস্থায় প্রযোজ্য হবে’-এমন শর্ত রেখে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮ এর গেজেটও প্রকাশ হয়ে গেলো। এরপর একদিন দারাজ-ফুডপান্ডাসহ বিদেশি কোম্পানিগুলোর কয়েকজন গিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসলো যে, বিনিয়োগ নীতির সঙ্গে এটা সাংঘর্ষিক। ব্যস, সব আন্দোলন সংগ্রাম ওইটুকু গরম বাতাসে ফানুস হয়ে উড়ে গেলো।  আগের শর্ত বাদ দিয়ে নতুন করে ই-কমার্সে বিদেশিদের শতভাগ বিনিয়োগের সুযোগ রেখে নীতিমালা সংশোধন হয়ে আবার নতুন করে গেজেট হলো।

যাইহোক নতুন একটি খবর দেই, সম্প্রতি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআিই) এর অর্গানাইজ ক্রাইম ইউনিটের একটি তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ মিলেছে যে, নগদের দ্রুত প্রসার এবং ব্যবসায়িক সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে বিকাশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে নগদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

ও হ্যা, বিকাশের অন্যতম বিনিয়োগকারী আলীবাবা।এছাড়া দেশে আলীবাবার আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে দারাজ। সাম্প্রতিক সময়ে এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটিও বাংলাদেশের একটি কোম্পানির সঙ্গে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতায় দিশেহারা অবস্থায়।

ভাবতে থাকুন, আমি বরং এই আবহাওয়ায় আরেকবার না হয় নবাব সিরাজউদ্দৌলার ইতিহাস পড়ি।
Writer- Al-Amin Dewan
Rate this post