জ্যাক মার দশ উপদেশ
জ্যাক মা, বিশ্বখ্যাত ই-কমার্স সাইট আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা। কোন মতে স্কুলের গন্ডি পাড়ি দিয়েছিলেন জ্যাক। পেশা জীবনে ৩০ বার চাকরীর চেষ্টা করে বাদ পড়েছেন, শেষ পর্যন্ত হাজার ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ই-কমার্স সাইট আলিবাবার। সফলতা কিভাবে পেতে হয়, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই প্রসঙ্গে তরুণদের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
চলুন জেনে নেই, জ্যাক মার চোখে সাফল্যের দশটি উপদেশ!
স্বপ্নটা বেঁচে থাক
জ্যাক মা মনে করেন নিজের উপর বিশ্বাস থাকলে বড় স্বপ্ন দেখতে কোনো বাধা নেই। যদি স্বপ্নটা বেঁচে থাকে তাহলে আপনার বেঁচে থাকাও হবে রোমাঞ্চকর। জ্যাক মা বলেন হাল ছেড়ে দেওয়া হলো সবচেয়ে বড় পরাজয়। আপনি যখন উদ্ভট কোন স্বপ্ন দেখবেন, তখন তাদের সঙ্গে থাকুন, যারা আপনাকে বিশ্বাস করে। এই মানুষগুলো আপনাকে শক্তি যোগাবে। জ্যাক মার উদ্ভব স্বপ্ন গুলোর মধ্যে একটি ছিল সিনেমায় অভিনয় করা। তিনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
প্রত্যাখ্যাত হওয়া জীবনের অংশ
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হতে গিয়ে, চাকরি করতে গিয়ে, মানুষের সহায়তা চাইতে গিয়ে, বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন জ্যাক মা। কিন্তু আশা হারাননি। নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি শিখেছেন প্রত্যাখ্যত হওয়াও জীবনের অংশ। তাই আশা হারালে চলবে না। জ্যাক মা হার্বাট বিশ্ববিদ্যালয় ১০ বার আবেদন করেও প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। সেই তিনি এখন প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে বক্তৃতা দেন।
দলগত ভাবে কাজ করা শিখুন
১৮ জন বন্ধুকে নিয়ে আলিবাবা শুরু করেছিলেন জ্যাক মা। তিনি সব সময় দলগত ভাবে কাজ করায় বিশ্বাসী। তার ভাষ্য, আপনি যতই প্রতিভাবান হোন না কেন, দলগত ভাবে কাজ করতে না পারলে আপনার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে। আপনি যদি সফল হতে চান তাহলে আপনাকে অনেক মানুষের সঙ্গে কাজ করা জানতে হবে।
মানুষের বিশ্বাস অর্জন করুন
আপনি একটা প্রতিষ্ঠান প্রধান হতে পারেন। একজন সাধারণ কর্মী হতে পারেন। কিন্তু আপনাকে সহকর্মীদের বিশ্বাস অর্জন করতেই হবে। যদি শিক্ষার্থী হন তাহলে বন্ধুদের বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। তাহলে একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন। জ্যাক মা বলেন ১৮ জন বিনিয়োগকারী আমার উপরে বিশ্বাস রেখে ছিলেন। তারা বিশ্বাস করেছেন বলেই আমাকে কাজের ক্ষেত্রে খুব সচেতন হতে হয়েছে।
প্রতিযোগীকে অনুসরণ করবেন না
জ্যাক মা কখনোই প্রতিযোগীদের বড় করে দেখেন নি। তার বক্তব্য সোজাসাপ্টা, প্রতিযোগীর কাছ থেকে শিখুন কিন্তু তাকে অনুসরণ করবেন না। অনুসরণ করেছেন তো মরেছেন। নিজের ব্যবসার কৌশল সম্পর্কে বলতে গিয়ে তার মন্তব্য, আমি আমার গ্রাহকদের দিকে তাকিয়ে থাকি। তারা কি চান, ভবিষ্যতে আর কী চাইতে পারেন, গ্রাহকদের চাহিদা অনুসরণ করাই আমার কাজ।
সেরা নয়, সঠিক মানুষ খুঁজুন
সাফল্য পেতে হলে একটা দল হয়ে কাজ করতে হয় একথা জ্যাক মা বারবারই বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, সাফল্য পেতে হলে সঙ্গী হিসেবে সেরা মানুষটিকে নয়, সঠিক মানুষটিকে খুঁজে বের করুন। কেউ হয়তো তার কাজের ক্ষেত্রে সেরা, কিন্তু আপনার পাশে থেকে কাজ করার মত মানসিকতা আর নেই। আবার কেউ হয়তো সেরা নয়, কিন্তু আপনার সঙ্গে তার বোঝাপড়াটা হবে ভালো। তাই সেরা মানুষটিকে নয়, সঠিক মানুষটিকে খুঁজুন।
নিজেকে প্রশ্ন করা শিখুন
স্বপ্নের পেছনে যখন ছুটবেন, তখন অবশ্যই নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে। আমার কি আছে? আমি কি পারি? আমি কি চাই? এসব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে জানতে হবে। জ্যাক মা মনে করেন, এসব প্রশ্নের উত্তর আপনাকে লক্ষ্য ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
অন্যের ভুল থেকে শিখুন
জ্যাক মা বলেন, অন্যের সাফল্য থেকে না শিখে, অন্যের ভুল থেকে শিখুন। একেকজনের সাফল্য একেক ভাবে ধরা দেয়। কিন্তু সব মানুষ মোটামুটি একই রকম ভুলের মধ্য দিয়ে যায়। ভুল প্রসঙ্গে তাঁর আরেকটি কথা আপনি মাথায় গেঁথে নিতে পারেন। জ্যাক মা বলেন, যখনই মানুষের হাতে টাকা আসতে শুরু করে, তখন সে ভুল করতে শুরু করে।
অভিযোগ করার আগে সমাধান জানান
সমস্যা নিয়ে ভাবনার চেয়ে সমাধানকে বেশি জোর দেন জ্যাক মা। তরুণদের তিনি সব সময় বলেন, আপনি যদি কোনো সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেন, তাহলে আপনার উচিৎ আগে সেই সমস্যার সমাধান জানা। আপনার কাছে যদি সমাধান না থাকে তাহলে চুপ থাকা শিখুন। একাই কিভাবে, আপনি যদি পরিবর্তন চান তাহলে নিজেই পরিবর্তন শুরু করুন। যদি পরিবর্তন না চান তাহলে চুপ থাকুন।
সবসময়ই কিছু না কিছু শিখুন
জ্যাক মার বয়স ৫৬ ছাড়িয়েছে। কিন্তু এখনো নতুন কিছু শেখার ব্যাপারে তার আগ্রহ ভীষণ। এখনো নিয়মিত মার্শালাট শিখছেন। কৈশোরের নয় বছর ইংরেজি শেখার জন্য পর্যটকদের গাইড হিসেবে কাজ করেছেন। অন্যের কাছ থেকে শেখার আগ্রহ তার সব সময় ছিল। পেশা জীবনের সাফল্যের জন্য জ্যাক মা পরামর্শ, দুর্দান্ত কোন বসের অধীনে কাজ শিখুন। ভালো বন্ধুর চেয়ে ভাল বস অনেক কিছু শেখায়। দারুন বস আপনাকে নিয়মানুবর্তিতা শেখাবে, প্রশিক্ষণ দেবে, আর আপনাকে উন্নত করবে।
সূত্র: ইন্টারনেট