Site iconSite icon Evaly Fan's Club

ই-কমার্স , মডেল , অনুসন্ধান ও হিংসা

ই-কমার্স , মডেল , অনুসন্ধান ও হিংসা

আমি আমার লেখার শুরুতে সব সময় বলে নেই লেখাটা আমার মস্তিস্ক প্রসুত । আজকের লেখাটা সরাসরি আমাদের ইকমার্স ইন্ডাস্ট্রির ভূত ও ভবিষ্যৎ এর সাথে জড়িত । কিছু কল্পনা এবং বিবেক প্রসূত আলোচনা । লেখাটা অনেক বড় হবে হয়ত তাই একটু বেশি সময় পড়ার মানসিকতা নিয়ে পড়তে বসার অনুরোধ । 

প্রথমেই আমি আসি আমাদের দেশের বর্তমান ইকমার্স পরিস্থিতি নিয়ে সাধারন মানুষের ভাবনায় । 

সাধারন মানুষ এখন ইকমার্স বলতে যে কোন পন্য যে তার বাবার জন্মে যত কমে কিনে নাই তার চেয়ে কমে কিনতে পারার একটা আকাঙ্ক্ষা । এই লোভের মধ্যে কিছু অলি আওলিয়া ছাড়া মোটামটি সবাই আছেন । আমি নিজেও অফার খুজি । এখন মনে হতে পারে অফার খোজা বা অফার থাকা কি তাহলে ইকমার্স কে পিছিয়ে দিচ্ছে ? আমার সোজা উত্তর হচ্ছে না , অফার দেয়ায় বরং মানুষ ইকমার্স এ কেনাকাটায় অভস্থ হচ্ছে – কিন্তু যেভাবে অফার দেয়া হচ্ছে এবং অফার এ পন্য কেনার কারনে যেভাবে মানুষ – প্রতারনা আর হয়রানির স্বিকার হচ্ছে তা ইকমার্স এর ভূত ও ভবিষ্যৎ এর জন্য অতন্ত্য অশনি সংকেত । 

কিন্তু আসলে ইকমার্স এর উপুর্যপুরি কার্যকারিতে হওয়া উচিত ছিল বাজার মুল্যের থেকে ৫-১০% কম দামে একই পন্য দ্রুত সময়ে বাসায় ডেলিভারি করা । এই সার্ভিস লেভেল উন্নয়ন ঘটাতে পারলে মানুষ এমনিতেই অনলাইন এ কেনাকাটা করত । লোভ দেখায়ে কিনতে শেখানোর চেয়ে – কেন অনলাইন এ কেনাকাটা করা দরকার তা মানুষ কে বুঝিয়ে কেনাকাটা করা শেখানো বরং অতি মাত্রায় টেকশই সিদ্ধান্ত হতে বলেও আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি । 

এখন আসি সাধারন জনগন কিভাবে প্রতারনার স্বিকার হচ্ছে এবং এক্ষেত্রে আমাদের দেশের হুট হাট কমার্স গুলির  দায় ও অবস্থান কি ? 

এই প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় প্রথমে আমি যে বাক্যটি বলব এজন্য কারো অনুভুতিতে আঘাত হানলে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি শুরুতেই – আমাদের দেশের মানুষের কয়েকটি ব্যাপারে অতি দূর্বলতা রয়েছে – এক এদেশের মানুষ ধর্ম ভিরূ ( যে কোন ধর্ম ভিত্তিক ব্যবসা এদেশে দ্রুত প্রসার পায় , মানে কোন একটা ব্যবসা আপনি করছেন এবং তা ধর্মীয় ভাবে স্বিকৃত হলে তা অতি দ্রুত প্রসার পায় ) । আলহামদুলিল্লাহ আমি নিজেও এই ক্যাটেগরির আমার পরিচিত অধিকাংশই এই ক্যাটেগরির। 

ইমোশনাল আমরাঃ আমাদের দেশের মানুষ খুব ইমোশনাল – অন স্ক্রিনে কেউ কি করল এটার উপর মানুষের উপর তাদের ধারনা তৈরি হয় খুব দ্রুত – এজন্য আমাদের হিরো থেক ভিলেন হওয়া মানুষের সংখ্যা অগনিত। 

আমাদের দেশের মানুষ প্রচুর পরশ্রিকাতরঃ মানে কারো বাড়ি হলে আমারো যেভাবেই হোক বাড়ি করতেই হবে এরকম একটা মানসিকতা রয়েছে এদেশের মানুষের মধ্যে । আবার আমরা কোথাও থেকে অস্বাভাবিক লাভ পেলে সেখানে লোভের সৃষ্টি হয় অনেক। 

প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এগুলা বলে নেয়ার কারন টা বলি – এই যে মার্কেট এ জনগন কে দুই ভাবে ইকমার্স এ আনা যেতে পারে – অতিরিক্ত লাভ দিয়ে ( লোভ দেখিয়ে) , আর  ভাল সার্ভিস দিয়ে ও সার্ভিস কেন নিবেন তার কার্যকারিতা বুঝিয়ে । ব্যবসায়িক দিক দিয়ে দেখলে আমাদের দেশের জন্য লোভ দেখিয়ে মার্কেটিং করাটা মানুষের ভাল বুঝিয়ে মার্কেটীং এর চেয়ে সহজ ( যেহেতু আমরা জ্ঞান নিতে পছন্দ করিনা , আমরা বই থেকে পর্যন্ত জ্ঞান নিতে পছন্দ করিনা যদিও সেলফ এ বই সাজানো আর ছবি দেয়া আমাদের নস্টালজিক করে দেই) । এখন কোন একটি প্রতিষ্ঠান এই পরশ্রিকাতরতা আর লোভের উপর সুন্দর করে গুড় মাখিয়ে তাদের ব্রান্ডিং করতে সফল হয়েছে – সে গুড় যার টাকাতে কেনায় হোক – যেহেতু কেনার সময় সাধারন জনগন বা আপনি আপনার স্থান থেকে কোন প্রকার বাধা প্রদান করেন নি ( আমি আপনি বলতে আমাদের চলিত ব্যবসায়িক বিধিনিষেধ ) তাহলে আমাদের লোভ পুজি করে মার্কেটীং করাকে আমি বে আইনি বলতে পারিনা – নৈতিকতা আর আইন দুইটা ভিন্ন জিনিস এটা আমাদের বুঝতে হবে । দেশে কোন মুসলিম তরুন শুয়োর খেলে তা অনৈতিক তবে তা বে আইনি নয় এই সহজ বাংলা আমাদের বুঝতে হবে। 

এই যে লোভ দেখিয়ে এক্স কোম্পানি সাফল্য পেল – এর জন্য কি কোন কোম্পানি পরশ্রিকাতর হবেনা ? এহেহেহে – হবে হবে – তেমন হয়েছেও এদেশে – এক্স এর বদলে এক্স প্রো , এক্স প্রো মাক্স , এক্স ডাবল ধামাল ইত্যাদি বের হয়েছে । এবং সবাই মিস্টার এক্স এর দেখানো পথে হাটলেও সামনে মিস্টার এক্স কিভাবে পথ তৈরি করছেন তা বাকিদের জানা নেই – সুতরাং সেখানে তারা তাদের পথ ভুল করলেও খেসারত দিতে হবে জনগনকেই । এবং এর দায় নিতে হবে মিস্টার এক্স কেও – ব্যাপারটা বুজলেন না? 

উদাহরন দিই দাড়ান বাবল গামটা চিবিয়ে নেই – 

উদাহরন হচ্ছে – ধরুন একটা এলাকার মানুষ নিয়মিত বাজারে যায় বাজার করতে সে জন্য তাদের ৪ কিলো পাকা পথ ( প্রচলিত ইকমার্স ) পাড়ি দিতে হয়। এখন কোন এক হ্যামিলনের বাশিওলা এসে বললেন আমি জানি কিভাবে শর্ট কাটে অন্য  বাজারে যাওয়া যেতে পারে ( হুট হাট কমার্স) এবং সেখানে পন্যের দাম অনেক সস্তা  । তো তিনি গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাওয়া জঙ্গল সাফ করতে করতে বাজারের দিকে এগিয়ে গেলেন এবং পিছু পিছু নিলেন কিছু জনগন ( ক্রেতা আর কি) । এখন অনেক দূর চলে গেছেন তারা এসময় গ্রামের আরো কিছু ব্যবসায়ী ভাবলেন আরে কোন ব্যাপার না – রাস্তা তো করেই  গেছে আমরা খালি পিছনে পিছনে যাব আমাদের রাস্তা বরং ক্লিয়ার মানুষের পায়ের চাপে চাপে মসৃন ও বটে – তো যারা আগে এই পথ কল্পনাও করেনাই ( হুঠাট মডেল) তারা আরো বেশি মানুষ নিয়ে সেই পথ দিয়ে হাটা শুরু করল – 

ঘটনার টূইস্ট হচ্ছে – এই বাশিওলা সফল হতে পারেন , বিফল ও হতে পারেন এবং আলবৎ তার সফলতা আর বিফলতার সাথে বাকিদের ফলাফল সামন্তরিক। 

ধরুন বাশিওলা একটা বাঘের ডেরায় পৌছালো ( আইন) এবং তা তাকে খেয়ে ফেল্ল তাতে জনগনের ও জীবন শেষ , আগের ওলাদের ও শেষ পরের ওলাদের ও শেষ। তাহলে এই যে পথ আবিষ্কার কারী বাশি ওলা কি প্রতক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সবার জিবনের জন্য দায়ী নই? 

আবার ধরুন বাশিওলা সফল ভাবে এমন একটি বাজারে নিয়ে গেল যেখানে আসলেই সস্থায় মাল পাওয়া যায় এবং বাকিরাও পৌছাতে পারল তাহলে সেই বিজয়ের কৃতিত্ব ও তার। 

কিন্তু তিনি যে বন কাটছেন সেই হাতিয়ার শেষ পর্যন্ত টিকবে বা ধার থাকবে , বাঘা বা সাপের আক্রমনে দলেবলে মরবেন না এরকম নিশ্চয়তাও বনে বাদাড়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। 

উদাহরন শেষ .

এবার আবার বাস্তবে ফিরি এই যে হুট কমার্স এর অফার এ মানুষ অভ্যস্থ – সেই পথ অনুসরন করে কেউ যদি হুট প্রো খুলে পয়েন্ট বেচে টাকা নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যায় আমাদের প্রচলিত বিধি নিষেধ কি তাকে আটকাতে পারবে ? পারবে না। 

আইন এর ফাক খুজে ব্যবসা করা আর আইন তৈরি করে ব্যবসা করার মধ্যে যে নৈতিকতার একটা মোটা দাগ আছে তা মুনকার নাকিরের খাতা বন্ধ হবার আগে আমরা টের পাইনা । টের পেতে আমাদের ভালো লাগে না। 

____________________

এবার আসি বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে – যখনই সচেতন জনতা বা পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কোম্পানি বা ব্যক্তিরা দেখছে সেই কোম্পানি গুলির ব্যাংক ট্রাঞ্জেকশন বন্ধ হচ্ছে কিংবা নেগেটিভ কোন আংশিক তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে – আংশিক বলার কারন হচ্ছে ডাটা এনালিসিস এর ধরন উৎস ইত্যাদির কোন বালাই নেই দিলাম প্রকাশ করে – পেলাম শেয়ার হলাম হিরো আর কি । কিন্তু এই তথ্য গুলি আসলেই আমাদের সেক্টর এর জন্য কতটা মঙ্গলকর তা না ভেবেই আমরা নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশের জন্য তা প্রচারে লেগে পড়ছি যাতে করে নিতী নির্ধাকরা বরং এই সেক্টর এর উপর আরো তাদের কতৃত্ব স্থাপন করার সুযোগ পাবেন এবং আপনাদের ভবিষ্যৎ দাবি দাওয়া হাল্কা হয়ে যাবে বলে আমি সুচিন্তিত ভাবে ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি। 

সুচিন্তার ব্যখ্যা দেইঃ একটি পত্রিকায় একটি কোম্পানির মুল্ধন দেখানো হয়েছে বানিজ্য নিয়ন্ত্রন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ৬৩ কোটি টাকা – কিন্তু আসলেই কি কোম্পানির ভ্যালুয়েশন এভাবে হয়?  

মানে ধরুন স্পেস এক্স এর ভ্যালুয়েশন বর্তমানে ১০০ বিলিয়নের ও বেশি তার মানে কি তাদের ১০০০ বিলিয়ন এর রকেট আছে  , বা চেয়ার টেবিল বা দেখানো মূল্ধন? 

ধরুন বিডিশপ কে আমি ভ্যালুয়েশন করব বা তার মোট সম্পত্তি বিচার করব তাহলে সেক্ষেত্রে আমি কি মোট কি পরিমান পন্য আছে , কত টাকা ব্যাঙ্ক এ আছে কত টাকা মূলধন জমা এগুলা বিচার করব? 

যে দাম আসবে সেই দামে কি বিডিশপ নিজেকে বেচে দিতে রাজি হবে ? কিংবা ধরুন আপনার নিজের প্রতিষ্টান কি আপনি এরকম করে ভ্যালুয়েশন করে বেচবেন? 

সুতরাং একটি কোম্পানির ভ্যালুয়েশন নির্ধারন ১ দিন ল্যাপটপ নিয়ে নিজ ঘরে বসে করার কাজ নয় । এটা আমাদের মেনে নিতে হবে। 

আবার এই যে অনিশ্চয়তা সেবার মান দুর্বল – লাইবিলিটীস ইত্যাদিও কোন ভাবেই হেলা ফেলার জিনিস নয় – দেশে প্রচলিত একটি ব্যবসা যা দেশের প্রায় সকল সংস্থার সাথে সংযুক্ত থেকে ব্যবসা করছে তাকে বিশ্বাস করেও জনগন ভুল করে নি – এক্ষেত্রে কোন ক্ষতির সম্মুক্ষিন হলে জনগনের লোভের পাশাপাশী বিধি নিশেধ প্রয়োগে সকল সংস্থার অপারগতার ব্যাপারটাও ওঠে আসবে । সুতরাং চালাক নাকি ধোকাবাজ সেটার স্টেট মেন্ট প্রকাশ করো আমাদের ইকমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য শোভন কিছু নয়। 

আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি যে পথে কোম্পানি গুলি চলছে তা থেক নিস্তার পাওয়ার দুইটা পথ আছে  – এক জাতীয় ভাবে কোম্পানি গুলির প্রশাসন বোর্ড এর উপর নজর দারী এবং এর পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিইয়োগ পেতে জাতীয়ভাবে সহায়তা। 

আর কোম্পানি গুলির উচিত তাদের সেবার মান বাড়ানো , বিনিয়োগ খোজা , বিনিয়োগ এর মাধ্যমে আগের সকল লাইবিলিটীস পরিষ্কার করা এবং এদেশের ইকমার্স এর ব্যবসায়িক পরিবেশ কে আরো পরিছন্ন করে তোলা। 

আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি ডোলেন্সার চলে যাবার পর ফ্রিলান্সিং ইন্ডাস্ট্রি যেমন অবিশ্বাস এর পর্যায়ে চলে গেছিল – এই কোম্পানি গুলির সরা সরি বাজেয়াপ্ত হওয়া তার থেকেও খারাপ প্রভাব ফেলবে আমাদের দেশের ব্যবসা অংগনে । আশা করি খুব শিঘ্রই এই জন দোলাচল এর সমাধান হবে। 

Writer – Juel Rana 

Rate this post
Exit mobile version