Saturday, April 20, 2024
BusinessE-Commarce

ই-কমার্স কি বদলে দিবে ডিলারশিপ সাপ্লাই চেইন?

ইকমার্স কি বদলে দিবে ডিলারশিপ সাপ্লাই চেইন?

      আমাদের দেশের বড় বড় ব্রান্ড গুলি সাধারনত তাদের পন্য ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য – ডিপো টু ডিলার টু দোকান টূ কনজিউমার এই পদ্ধতিতে তাদের সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা চালিয়ে আসছে । আমাদের দেশের লজিস্টিক অবকাঠামো অনুযায়ী যা খুবই টেকশই হিসেবে পরিচিত এবং পরিক্ষিত । যেমন ধরুন – স্কয়ার ,প্রান , ইফাদ , মেঘনা গ্রুপ , যমুনা গ্রুপ ইত্যাদি কোম্পানির সাপ্লাই চেইন ।

      এখন আসি ইকমার্স কি এই পদ্ধতিকে বদলে দিতে পারবে ? কিংবা এখনি কি কোন ভাবে এই সাপ্লাই চেইন এ প্রভাব ফেলছে ? যদি প্রভাব ফেলেই থাকে তাতে করে উৎপাদন কোম্পানি গুলি কি পজিটিভ অবস্থানে আছে নাকি বরং নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারছে ?
উপরের ব্যাপার গুলিতে যাদের মোটেও ইন্টারেস্ট নাই , কিংবা যারা ১০০ টাকার পন্য কিভাবে কোন কোম্পানি ৬০ টাকায় দিতে পারছে , কিংবা কনজিউমার লেভেল এ পন্যের দামের তারতম্যে সাপ্লাই চেইন এর ভুমিকা নিয়ে যাদের নুন্যতম আগ্রহ নেই – এই পোস্ট টি তাদের জন্য নয়।

 

     ইকমার্স কি এই পদ্ধতিকে বদলে দিতে পারবে ?

প্রথমত যে কোন ঘর তৈরি করতে আগে তার ভীত ও অবকাঠামো নির্মান জরুরী , সেভাবে ইকমার্স লজিস্টীক বা ডীরেক্ট টূ কনজিউমার পলিসিতে ডিস্ট্রিবিউশন এ চলে আসতে হলে আমাদের যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন তার ৫% ও এখনো আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি । গড়ে তোলার জন্য তেমন কেউ কাজ করছে বলেও চোখে পড়ছেনা । সুতরাং অবকাঠামো না তৈরি করেই ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম বদলে ইকমার্স বর্তমান সময়ের রেগুলার লজিস্টিক সিস্টেম কে পরিবর্তন করে ফেলবে এই ব্যাপারে সন্দেহ থেকে যায় ।

     এখনি কি কোন ভাবে এই সাপ্লাই চেইন এ প্রভাব ফেলছে ?

হ্যা বর্তমান সময়ে কয়েকটি কোম্পানি এই সরাসরি এই মডেল এ ব্যবসা করছে বা করার প্রচেস্টায় আছে – এর মধ্যে ইভ্যালী , দারাজ অন্যতম ( ইভ্যালির ব্রান্ড এন্ড্রোস্মেন্ট ডাটা ও দারাজের ব্রান্ড শপ ডাটা) । এক্ষেত্রে একটি ব্রান্ড বা উৎপাদনকারী সরাসরি ডিপো , ডিলার কে ব্যতিরেখেই কনজিউমার লেভেল এ পন্য পৌছে দেবার প্রচেস্টা করছে । যেমন ধরুন স্যামসং –

    ১। সরাসরি মোবাইল ওয়ারহাউজিং , ডিপো ট্রান্সফার , ডিপো ব্রান্ডিং , ডিলার (এজেন্ট ) ব্রান্ডিং এবং পরিবহন ও কমিশন ইত্যাদি না করেই সরাসরি কাস্টমার পেয়ে যাচ্ছে এই ইকমার্স কোম্পানি গুলির দ্বারা । এতে করে কোম্পানি গুলিকে তারা বিশাল কমিশন দিতেও সক্ষম হচ্ছে।

    ২। ডিরেক্ট প্রি অর্ডার এর বেইজ করে প্রোডাকশন এ যেতে পারছে যা উৎপাদন কারীদের জন্য ভাল।

     ৩। লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে স্যামসং তাদের এই সুবিধা তাদের টার্গেট কত % কাস্টোমারের কাছে পৌছাতে পারছে – যে প্লাটফর্ম গুলি তারা ইউজ করছে তার টোটাল গ্রাহক ধরি ৫০ লক্ষ – তাহলেও তারা মোট ৯ কোটি মোবাইল ইউজার এর সর্বোচ্চ ৬% এর মত গ্রাহক কে এই সেবার আওতায় নিতে পারবে।

     উৎপাদনকারী কোম্পানি গুলি কি পজিটিভ অবস্থানে আছে নাকি বরং নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারছে ?

এই ব্যাপারটা আপাত দৃষ্টিতে খুবই দৃষ্টি নন্দন দেখালেও এই ব্যাপারটা অনেকটা নতুন বিয়ে করার মত শুরুতে অসাম ফিলিংস লাগ্লেও পরে এসে বোঝা যায় কত বড় দায় মাথায় চলে এসেছে ।

    প্রথমতঃ এই যে অল্টারনেটিভ সেলস ও সাপ্লাই চেইন কোম্পানি গুলি চালু করলে এতে বাজারে তাদের আগের রেগুলার সেলস ও সাপ্লাই চেইন এ দারুন আঘাত হানে , এর কারণ হচ্ছে খুবই সহজ – ধরুন স্যামসং ফোন ডিপো সাপ্লাই চেইন ধরে মার্কেট এ বিক্রেতার কাছে গেল ১০০ টাকায় আর ডিরেক্ট ইকমার্স এর মাধ্যমে ঐ বিক্রেতায় অনৈতিক বা আধা অনৈতিক ভাবে সংগ্রহ করল ৬৫ টাকায় – ঐ যে ডিপো বেইজড আপনার নিবেদিত বিক্রতা ছিল – তারা কিভাবে সাস্টেইন করবে কিংবা এই পাশা পাশি দোকানের যে বিশাল প্রাইস গ্যাপ এটা কিভাবে মেটাবে উৎপাদনকারী কোম্পানী গুলি ?

     দ্বিতিয়তঃ ধরুন যে প্রতিষ্ঠানটির সাথে মিলে মিশে নিজের পকেট থেকে কিছু , তাদের পকেট থেকে নিয়ে কিছু এই অল্টার নেটিভ সেলস চ্যানেল দাড় করানোর চেস্টা করলেন – তারা যে মূলধন সমস্যায় পড়বেনা , কিংবা ইনভেস্ট মেন্ট স্লোথ এ পড়বে না এর নিশ্চয়তাও কিন্তু আপনারা দিতে পারবেন না ।

     তৃতীয়তঃ এই যে অল্টারনেটিভ সেলস চ্যানেলটি ব্যবহার করছেন সেটি আপনার সাপ্লাই চেইন বিঘ্নিত না করার ব্যাপারে কত টূকি সিকিউরিটী মেজর ম্যানেজ করে চলতে পারে ? মানে ধরুন ইভ্যালী বা দারাজের মাধ্যমে যদি উৎপাদনকারী তার অল্টারনেটিভ সেলস চ্যানেল তৈরির কথা চিন্তা করে তাহলে অফার প্রাইস এ যে একজন সেলার অনেক গুলি ফোন আবার বিক্রয়ের জন্য কিনতে পারবেনা এর জন্য কি এমন সিকিউরিটি পলিসি রয়েছে আপনার ঐ পার্টনার প্রতিষ্ঠানের ?

    চতুর্থতঃ পন্য বিক্রয়ের সময়ে আপনার পার্টনার এর সাথে লং টার্ম ক্রেডিট এর যে চুক্তি গুলি ম্যানেজমেন্ট লেভেল বা ম্যানেজার লেভেল থেকে করছেন – যদি এই ক্রেডিট ফিরে পাওয়ায় টালবাহানা শুরু হয় বা কোন কারনে আপনার পার্টনার কোম্পানি ক্রাইসিস এ পতিত হয় তাহলে মালিক পক্ষ এই ব্যাপারে আপনাকে সহায়তা করবেন কিনা নিশ্চয়ন করেছেন কিনা । এমন যাতে না হয় আপনার ডিসিশন এ ডিল হলো আর মালিকের ডিসিশনে আপনার টীমেরই (ইকমার্স পার্ট) ই চাকুরী চলে গেল বা অনুরূপ ক্ষতি হলো ।

     আমাদের দেশের কোম্পানি গুলি অল্টারনেটীভ সেলস চ্যানেল পরিচালনায় প্রস্তুত কিনা ?

আমাদের দেশের বড় বড় অনেক উৎপাদনকারীর ই ইকমার্স জ্ঞান সম্পন্ন রিসোর্স দ্বারা গঠিত ইকমার্স টিম নেই । যাদের ইকমার্স টিম আছে তারা এই টীম টাকে সৎ সন্তান এর মত ব্যবহারের মাধ্যমে পরিচালনা করেন । ( ব্যতিক্রম থাকতেও পারে) ।

অল্টারনেটিভ সেলস আর সাপ্লাই এর জন্য অবকাঠামোর ঘাটতি রয়েছে প্রায় কোম্পানি গুলির । উদাহরন দিই- কিছুদিন আগে কাচ্চি ভাই ধানমন্ডি ইকমার্স একটি পার্টনারের দ্বারা একটি ক্যাম্পেইন চালায় – এতে তাদের সেলস বুস্ট হয়েছে নিঃসন্দেহে কিন্তু তাদের অবকাঠামো গত প্রস্তুতি ভাল না থাকায় তাদের রেস্টুরেন্টের এর সামনে শত শত ডেলিভারি ম্যান এর ভীড়ে তাদের রেগুলার কাস্টমার রা যে বিব্রত হন নাই এটা হলফ করে বলতে পারবেন না কোন পক্ষ ।

নিচের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যা হয় তবে আমার ব্যক্তিগত মতে ইকমার্স সেলস চ্যানেলটির মাধ্যমে আপনার বিকল্প সাপ্লাই চেইন স্থাপনা আপনার জন্য একাদশে বৃহস্পতি – আর যদি না হয় – ই তে শনি ।

     ১। আপনার সেলস পার্টনার এর সারা দেশে পন্য পরিবহন করার নিজের পরিবহন অবকাঠামো আছে কি ?
    ২। আপনার পার্টনার পলিসি কোন ভাবেই আপনার রেগুলার সাপ্লাই চেইন পলিসির সাথে ক্রসিং করছে না এর গ্যারান্টী আছে কি ?
    ৩। আপনার অর্থনৈতিক অবস্থান ( পার্টনার এর সাথে) আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুকুল পর্যায়ে আছে কি ?
৪। আপনার প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ইকমার্স ম্যানেজমেন্ট ডিপার্ট্মেন্ট বা উইংস আছে কি ?
    ৫। আপনার প্রতিষ্টান আপনার ব্রান্ডের পন্য সঠিক সময়ে সঠিক সার্ভিস লেভেল এগ্রিমেন্ট ( সময়ে) অনুযায়ী ডেলিভারি করতে পারছে কি ?
    ৬। আপনার পার্টনার এর কারনে আপনার মার্কেট এর দোকানদার কোন ভাবে তার বিক্রয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে না এটাতে আপনি সন্তুষ্ট কি ?

যদি আপনি নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারতেছেন মনে হয় তাহলে নিচের পয়েন্ট গুলিতে আপনি ও আপনার পার্টনার নজর দিনঃ

    ১। সারাদেশে ইকমার্স সাপ্লাই চেইন স্থাপন
    ২। পন্য পরিবহন ও বিপণন সহ ওয়ারান্টি ইত্যাদি সার্ভিস এর জন্য স্পেশিফিক পলিসি
    ৩। প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনার ইকমার্স উইংস কে শক্তি শালী করুন ।
    ৪। অর্থনৈতিক লেনদেন ও আপনার পন্য গ্রাহক কে দেবার সঠিক এস এল এ পলিসি নির্ধারন করুন
    ৫। আপনার ও আপনার পার্টনার এর সিস্টেম এর আওতায় আপনার বর্তমান ডিলার , ডিপো ও বিক্রেতাকে সংযুক্ত করার চেস্টা করুন ।

Rate this post