এস্ক্রো সিস্টেম আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ?
যে কোন লেনদেন এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করনের জন্য ঝামেলাহীন যেকোন পদ্ধতিকেই আমি ব্যক্তিগত ভাবে পছন্দ করি, যেমন ধরুন বিকাশ এর সিম আর মোবাইল এক সাথে থাকা লাগবে মেথড। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের ইকমার্স ইকোসিস্টেম এ যে ব্যাপারটি নিয়ে সব থেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে তা হলো এস্ক্রো পেমেন্ট৷
সহজ করে বললে আপনি কোন উদ্যেশ্যে কাউকে সরাসরি টাকা না দিয়ে ঐ টাকা আরেকজনের কাছে রাখলেন এবং উদ্যেশ্য সাধিত হলে সেই টাকা সেই ব্যক্তি পাওনাদারকে দিয়ে দিল। উদ্যেশ্য সাধিত না হলে যার টাকা তাকে ফেরত।
ব্যাপার টা কিন্তু মোটেই নতুন কিছু না। আমাদের সমাজে এরকম অলিখিত এস্ক্রো চলে আসছে বহুকাল ধরে, আপনি আমি সেগুলা আসলে আচকরতে পারছিনা, আমরা আবার স্যারের মত এত জ্ঞানী না আর কি।
ব্যাপারটা খোলসা করি। দেখুন তো এই এস্ক্রো গুলি চিনেন কিনা – আপনার ছেলের জব দিবে কোন এক আমলা আপনি টাকা দিলেন এলাকায় থাকা কোন দালাল কে। কিংবা আপনাকে পরিক্ষার প্রশ্ন দেবার ও তা কমন আসার গ্যারান্টি দেয়া ইকোসিস্টেম কেও জানেন এটাও এস্ক্রোর বাংলাদেশি ভার্সন।
আশাকরি এস্ক্রো বুঝে গেছেন। এখন আসি সুবিধা আর অসুবিধা নিয়ে –
১. সুবিধা হচ্ছে কাজ হোক বা না হোক আপনার টাকার একটা নিরাপত্তা থাকবে, নির্দিষ্ট সময় পর কাজ না হলে টাকা ফেরত পাবার আশা থাকে আবার কাজ করে দেবার পর টাকা না পাওয়ার ভয় ও থাকেনা।
২. সেবা গ্রহনের পর তা যাচাই এর জন্য গ্রাহক কিছু সময় পান।
৩. গ্রাহক সেবা বুঝে পেয়েছেন বলার অধিকার অর্জন করেন
অসুবিধাঃ
১. প্রথমত মাঝের এস্ক্রো মাগ্না কাজ করবে না তাকে তার দালালী দিতে হয়, সে কাজ হলেও দালালী পায় না হলেও পায় ( এস্ক্রো চার্জ)
২. অনেক সময় দালাল নিজেই এই টাকা দিতে চাইনা, আপনিও বিচার দিতে পারেন না ( কোন ফল্ট থাকলে)।
৩. কাজ সম্পন্ন হওয়া সত্তেও দালাল থেকে টাকা বের করতে সময় লাগে অনেক সময়, দালাল গড়িমসি করে।
৪. অনেক সময় সেবা পাবার পরেও যিনি সেবা নিয়েছেন তিনি তা অস্বিকার করেন [ যেমন সব প্রশ্ন কমন ছিল না ( পড়ুন পন্য ঠিক ছিল না) , চাকুরি এম্নেই পাইছি ( পড়ুন পন্য দুই নম্বর পাইছি) ] । এমতাবস্থায় দালাল কাউকেই টাকা দিতে পারেন্ না বিধায় নিজেই বাসায় সেই টাকা দিয়ে গরু পুষেন।
এতো গেল এস্ক্রো কি বুঝানোর ব্যাপার টা –
ডিজিটাল অংগনের এস্ক্রো একটু ভিন্ন, পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন ডিজিটাল সার্ভিস কেনাবেচায় আমরা এস্ক্রোর দেখা পায় কারন সেটার প্রয়োজনীয়তাও যেমন তার অবকাঠামোও তত উন্নত – উদাহরন দেয়া আবার আমার অভ্যাস
ধরুন একটা সফটওয়্যার এড দেখে কিনলেন ( পেপাল এস্ক্রোর মাধ্যমে) তো সফটওয়্যার টি চেক করার জন্য আপনার কিছুদিন সময় লাগতে পারে এরকম একটি বিধি রেখেই পেপাল তা পরিচালনা করে এর পর গ্রাহক পছন্দ হলে সফটওয়্যার টি নেবার ব্যাপারে এগ্রি করেন ও সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেমেন্ট এর শর্ত অনুযায়ী সফটওয়্যার টি আনলক করে দেন।
মাথায় রাখার বিষয় হচ্ছে এমতাবস্থায় যদি কাস্টমার বলত সফটওয়্যার ঠিক নাই, পেপাল কাস্টমার কে মানি ব্যাক করে দিত আর সফটওয়ার প্রতিষ্ঠান সফটওয়্যার ব্লক করে দিত, উভয়েই খুশি।
বিশ্ব জুড়ে ডিজিটাল ৮০% এর ও বেশি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সার্ভিস কেনা বেচার ক্ষেত্রে এস্ক্রো বহুল প্রচলিত।
এখন আসি অফ্লাইন সেবা বা পন্যের ক্ষেত্রে এস্ক্রো কেমন হতে পারে –
ধরুন একজন ক্রেতা পন্য অর্ডার করলেন এবং পেমেন্ট করলেন। পেমেন্ট যেকোন একট এস্ক্রো প্রতিষ্ঠান এর কাছে জমা থাকল। পন্য ক্রেতার কাছে গেল ক্রেতা ফিংগারপ্রিন্ট বা অটিপি দিয়ে পন্য পেয়েছি রুপে জানাল এবং এস্ক্রো সয়ংক্রিয় ভাবে তা বিক্রেতার একাউন্ট এ পাঠিয়ে দিল।
খুবই উন্নত ব্যাপার স্যাপার। এরকম আছেও কতক গুলি দেশের কিছু ওয়েবসাইট এ। বাস্তবিক ভাবে মানেন বা না মানেন আমাদের দেশের ইকোসিস্টেম কখনোই এত স্মুধ চলে না, তাই আমাদের এর রিস্ক ফ্যাক্টর গুলিও চিন্তা করতে হবে বইয়ের বাইরে এসে একান্তই আমাদের মত করে –
আমার ছোট মস্তিস্কে আসা কিছু ভাবনা শেয়ার করলামঃ
১. আমাদের দেশের বেশির ভাগ টেক্নিক্যাল অনলাইন ক্লাউড সুপার ডুপার সার্ভিস খালি কাগজ কলমেই হয়ে থাকে আমাদের, উদাহরন দিইঃ যত গুলি কোম্পানি আমাদের দেশে ওটিপি দ্বারা কিছু ভেরিফাই করে প্রায় প্রত্যকের বাইপাস সিস্টেম বা ডিফল্ট বাইপাস কোড থাকে – যেমন উবার রাইডার চাইলেই আপনার ফোনের লাস্ট ৪ ডিজিট দিয়ে রাইড শুরু করে দিতে পারবে। কুরিয়ার গুলির ও সেম। এর পিছের কারন কাস্টমার ওটিপি দিতে চাই না বা বাসায় থাকেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন এস্ক্রোর পর যে প্রতিষ্ঠান ও কাস্টমার রা একদম ইউরোপ স্টান্ডার্ড বিহ্যাবিয়ার করবে সেটা আমি ব্যক্তিগত ভাবে মানি না।
২. পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে একটা হেজিং লেগে যাবার সম্ভাবনা দেখি
৩. কাস্টমার বিক্রেতাকে ব্লাকমেইল করতে পারে
৪. বিক্রেতা অধিকার সংরক্ষন অধিদফতর খোলা লাগতে পারে
৫. কাস্টম পন্য তৈরি করার কারিগর সেবা প্রদান কারিরা কাচামাল কেনার জন্য মূল্ধন সংকটে পড়তে পারেন
৬. ড্রপ শিপিং ( আপনার টাকা দিয়ে বিদেশের পন্য কিনে দেয়) এর ছোট উদ্যোক্তারা ধ্বংস হয়ে যেতে পারেন
৭. টাকা রিটার্ণ দেয়ার জটিলতা সৃষ্টি হবে
৮. এস্ক্রো চার্জ নিয়ে ঝামেলা হতে পারে
কিন্তু এত কিছুর পরেও বাংলাদেশের ইকমার্স এর এই লাগাম হীন অফার দ্বৈরত্ব বা আশংকা জনক বাজার ঠেকাতে এস্ক্রোর কোন বিকল্প নাই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি ক্রেতা, বিক্রেতা ও সাপ্লাইয়ার দের কথা মাথায় রেখে একটি অটোমেটেড এবং ক্রেতার জন্য ঐচ্ছিক একটি এস্ক্রো সিস্টেম আমাদের দেশে আসুক এবং আমাদের দেশের ইকমার্স ইকোসিস্টেম এশিয়ার মধ্যে মাথা তুলে দাড়াক। আমরা এমাজন বা ইবে না করে বাংলাজন বা বাংলাবেই করি।
এস্ক্রোর ব্যাপারটি লাইম লাইট এ আসার পিছনে যে সকল মস্তিস্ক কাজ করেছেন তাদের কে ধন্যবাদ। এবং তাদের কে অনুরোধ আপনারা সকলের পাব্লিক অপিনিয়ন নিয়ে নিতীমালার উপর ভিত্তি করে এস্ক্রো সিস্টেম চালু করার মত ঐতিহাসিক একটি ব্যাপারে দেশকে আগিয়ে নিন।
আর যারা আমরা আমজনতা আছি আমরা ব্যক্তিগত চিন্তা নিয়ে গালাগালি না করে আমাদের মস্তিস্কে থাকা সমাধান গুলি একত্র করি।
সবাই মিলে সবার দেশ, ইকমার্স এ বাংলাদেশ।
Writer – Juel Rana
5/5 - (1 vote)