বেঁচে থাকুক দেশীয় শিল্প, দেশীয় প্রতিষ্ঠান।
সম্প্রতি ইভ্যালি নিয়ে অনেক জলঘোলা হচ্ছে, নিজেও যেহেতু ইভ্যালির একজন ছোটখাটো নিয়মিত গ্রাহক তাই আমি নিজে কেন ইভ্যালি থেকে কিনি, কি মনে করে তাদের কে বিশ্বাস করলাম সেটাই শেয়ার করবো।
ইভ্যালি সম্পর্কে জানি ২০১৯ সালের শুরুর দিকেই। আর তাদের যাত্রা শুরু ২০১৮ এর ১৬ ডিসেম্বর।
সেই থেকে তাদের দেখছি এবং নিজের মতো অবজারভেশন করেছি ।
তারা এমন একটা সময় মার্কেটে এসেছে যখন দারাজ মার্কেটে খুব ভালো ভাবে প্রতিষ্ঠিত। শুধু দারাজ না পিকাবো,আজকের ডিল, প্রিয় শপ, এবং অথবার ও ভালো নাম ডাক বা মার্কেটে অনেকটাই পরিচিত। এমন সময় তাদের মতো একটা নতুন মার্কেটপ্লেস থেকে মানুষ কেন কিনবে? যদি কিছু এক্সট্রা না ই পায় ? সেটা হোক ভালো সার্ভিস বা কম দামে পণ্য !
বাংলাদেশ একটা হিউজ মার্কেট। কিছু তথ্য মতে শুধুমাত্র ঢাকাতেই প্রায় ২ কোটি মানুষ বাস করে । আর তাই নাগরিক সুবিধার দিক থেকে ঢাকা স্বভাবতই অনেক পিছিয়ে। শুধুমাত্র ঢাকাতেই যদি কোন ইকমার্স সাইট ২০/৩০ লক্ষ নিয়মিত গ্রাহক তৈরি করে ধরে রাখতে পারে তাহলেই বুম। ইভ্যালি তাই সব দিক বাদ দিয়ে শুরু থেকেই গ্রাহক কে তাদের নিজেদের করে নেওয়ার দিকে নজর দেয়। তারা সম্পুর্ন এক ভিন্ন পলিসি নিয়ে মার্কেটে আসে। সেই সময়টায় দারাজ সব থেকে বেশি সেল জেনারেট করলেও প্রায় প্রায় ই দেখা যেতো মোবাইলের বদলে পেঁয়াজ,হুইল সাবান পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া অনেক ভুয়া পেজের প্রতারণায় মানুষ ই কমার্স নিয়ে তিক্ত বিরক্ত।
ইভ্যালি তাদের প্রমোশন শুরু করে 1000 টাকার ফ্রি শপিং দিয়ে। তারপর দেয় ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ৫০০ টাকার ফ্রি বই। তাছাড়া ৩০০ % ভাউচার,২৫০ % ভাউচার ত ছিলোই। তখন তাদের একটা ট্যাগ লাইন ছিলো নো রিটার্ন অনলি রিফান্ড। মানে ভুল প্রোডাক্ট বা সাইজ, কালারে সমস্যা হলেও তারা সেটা রিটার্ন নিতো না, গ্রাহক যা পেয়েছে সেটা তার ই থাকবে সাথে তার সেই অর্ডার এমাউন্ট টা সে ফুল রিফান্ড পাবে। অনেকে শুধুমাত্র প্যান্ট এর কালার ভুল যাওয়ার কারণেও প্যান্ট ত পেয়েছে ই সাথে ফুল টাকাও রিফান্ড পেয়েছে।
তারা এই পলিসিটা শুরু করে কারণ দরাজ থেকে প্রতিনিয়ত ভুল প্রডাক্ট পেয়ে মানুষের অনলাইন বায়িং বিহেভিয়ার এ প্রচন্ড নেগেটিভ ইফেক্ট পড়ে।
তাছাড়া কিছু ভুঁইফোড় পেজ নানা রকম লোভনীয় প্রাইজ দিয়ে পোস্ট বুস্ট করে প্রতারণা করে অনলাইন কেনাকাটা টাকে প্রতারণার এক বিশাল ফাঁদে রূপান্তরিত করে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ইভ্যালি গ্রাহকরের আস্থা এবং বিশ্বাস অর্জনের দিকে নজর দেয় এবং অল্প দিনেই সেটা অর্জন করতে সক্ষম হয়। বুলেট গতিতে তাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়তে থাকে সেই সাথে তাদের নাম ও।
আমি জানুয়ারি থেকেই তাদের এসব বিভিন্ন অফার দেখছিলাম কিন্তু কিনার ইচ্ছা বা সাহস কোনোটাই ছিলো না। শুধু দেখতাম তারা কি করছে আর রিভিউ পড়তাম। এভাবে হাতের উপর দিয়ে 300%,250% ভাউচার, যারা ভাউচার নিয়েছে তাদের জন্য আবার স্পেশাল অফার পাছ করলাম কয়েকটা । ৩/৪ মাস তাদের অবজারভেশন শেষে মনে হলো ইভ্যালি ভাগবে না আর ভাগলেও এত তাড়াতাড়ি ভাগবে না। কারণ তখনকার পরিস্থিতি বিবেচনায় তারা যা ইনভেস্ট করেছে সেটা তুলে আবার লাভ করে ভাগা এত দ্রুত সম্ভব না তাই মার্চ এ 200% ভাউচার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ২ একাউন্ট থেকে ২০ হাজার আর ১০ হাজার এর ১ টা করে ভাউচার নিলাম। সেই থেকে শুরু। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ভাউচার এবং গিফট কার্ড ইউজ করে ল্যাপটপ, মোবাইল, বাড়ির জন্য আরো বেশ কিছু ছোট বড় জিনিস মিলিয়ে ২০+ অর্ডারে লাখ টাকার উপর পণ্য নিয়েছি।
সব গুলো পণ্যই ১৫ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই পেয়েছি আমি। ২০ টা প্রোডাক্ট রিসিভ করে ইভ্যালি অফিসিয়াল গরুপে ৩ বার রিভিউ দিয়েছিলাম। অন্য কোন গরুপে ত দেই ই নি। আমার মতো এমন পাবলিক কয়েক লাখ হবে। আমার পরে আমাকে দেখে সাহস করে আমার এক ক্লোজ ফ্রেন্ড টিভি,ফ্রিজ,মোবাইল,ব্লেন্ডার সহ লাখ টাকার উপর প্রোডাক্ট নিয়েছে রিভিউ দেয় নি। আমার রুম মেট ২ জনে ২ টা FZV2,একটা r15 এবং একটা হিরো সহ মোট ৪ টা বাইক নিয়েছে রিভিউ দিয়েছে 2 বার। অথচ এই আমার ই যদি কোন কোন প্রোডাক্ট পেতে লেইট হতো আমি নিজেই কমপক্ষে ১৫ টা গরুপে পোস্ট দিতাম, সব পোস্টের কমেন্টে ইনভয়েস নাম্বার দিয়ে সকাল বিকাল কমেন্ট করতাম। ভোক্তা অধিকারে যাইতাম। আমি মানুষ একজন,প্রোডাক্ট একটা পাইতে লেইট হচ্ছে অথচ কত জায়গায় কত হাজার বার আমার এই এক প্রোডাক্টের আহাজারি ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিপরীতে আমি ২০+ প্রোডাক্ট রিসিভ করে রিভিউ দিয়েছিলাম মাত্র একটা।
এখনো ৩ টা অর্ডার প্রসেসিং এ আছে।
আজকে পর্যন্ত এই হচ্ছে ইভ্যালির সাথে আমার সম্পর্ক।
তখন আমি নিজে যেহেতু অর্ডার করে ফেলেছিলাম তাই প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত খুব ভালোভাবে ইভ্যালির প্রতিটা পদক্ষেপ ফলো করতাম,সবসময় গরুপে নজর রাখতাম ডেলিভারি ও অন্যান্য ইস্যু নিয়ে রাসেল সাহেবের লাইভ গুলো খুব ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতাম।
ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল সাহেবকে আমার কাছে একজন ভিশনারি মানুষ মনে হয়েছে। খুব ভালোভাবে মার্কেট রিসার্চ করে এবং লক্ষ নির্ধারণ করেই উনি মাঠে নেমেছেন। উনার ভিশন এবং মিশন উনার সামনে খুব পরিষ্কার। আমেরিকা ,ইউরোপ এমনকি ইন্ডিয়াতেও ই কমার্স এর বিপ্লব ঘটলেও বাঙলাদেশ ছিলো অনেক পিছিয়ে। এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় বাঙলাদেশও যে ই কমার্স বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে সেটা দেশীয় কোন কোম্পানির হাত ধরে না হলেও বিদেশি কোন কোম্পানির দ্বারা হয়ে যাবে সেটা রাসেল সাহেব বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি আট ঘাট বেঁধেই নেমেছেন সেটা তার বিভিন্ন পদক্ষেপ দেখেই বুঝা যায়।
বাংলাদেশ এর এই বিশাল জনগোষ্ঠীর এত বিশাল মার্কেট নিজের আওতায় নিতে তাই তিনি নিজের সর্বস্ব নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন আমার সেটাই মনে হয়। কারণ সেই বাটা জুতার মতো ফ্রি দিয়েও যদি একবার জুতা পড়ার অভ্যাস করানো যায় তাহলে আজীবন ব্যবসা করে যেতে পারবে।
উনার বেশ কয়েকটা লাইভ আমি খুব ভালো ভাবে দেখে যা বুঝেছি উনি খুব আবেগপ্রবণ এবং আশাবাদী মানুষ।
উনার ব্যবসায়িক পলিসিও উনি বেশ কয়েকবার খোলাসা করেছেন। কিভাবে অফার দিচ্ছেন কি সমস্যার জন্য প্রোডাক্ট দিতে লেইট হচ্ছে সেই কারণ গুলাও উনি অনেকবার বলেছেন। এবং সেটা আমার কাছে ব্যালিডই মনে হয়েছে।
ইভ্যালি গ্রহককে সব সময় ফার্স্ট প্রায়োরিটি দিয়ে আসছে। গ্রাহককে ধরে রাখতে অনেক সময় অফারের উপর অফার দিয়েছে। লেট ডেলিভারির জন্য এক্সট্রা বোনাস দিয়েছে। তাদের সিস্টেম এর প্রবলেম এর জন্য এপলোজি বোনাস দিয়েছে। লাইভে এসে বিভিন্ন সময় গ্রাহকদের বিভিন্ন অন্যায় আবদার ও অকপটে পূরণ করেছে।
তাদের মূল যে সমস্যা তা হলো লেইট ডেলিভারি। এটা তাদের ওপেন সিক্রেট প্রবলেম। তারা এটা স্বীকার ও করে তাদের লোকবল এবং সিস্টেম এরর এর জন্যই এমটা হয়। এবং তারা এটা সমাধানে কাজ করছে। এটার পরিমাণ ও যত আহামরি মনে হয় কমেন্ট বক্স দেখে আসলে তত না কারণ পজেটিভ রিভিউ আর নেগেটিভ রিভিউ এর ব্যাপারটা উপরেই বলেছি।
তারপর হচ্ছে রিফান্ড ইস্যু এটাও সিস্টেমেটিক প্রবলেম। এইতো ১০/১৫ দিন আগের কথা গেমিং চেয়ার আইটেম এ প্রোডাক্ট ডেলিভারি ক্যানসেল হওয়াতে তারা এক প্রোডাক্ট এর জন্য ২ বার করে রিফান্ড দিয়ে দেয় মানে একবার ২০ হাজার করে দেওয়ার পর আবার ২০ হাজার করে দেয় ডাবল রিফান্ড। এখানেও তারা কাজ করছে বলে জানায়। তারা ০ থেকে শুরু করেছে সম্পুর্ন ০ অভিজ্ঞতা থেকে এবং প্রতিনিয়ত শিখছে।
যারা লেইট ডেলিভারি,রিফান্ড ইস্যু নিয়ে সমস্যা ফেস করেছে আমি বলবো তাদের ব্যাড লাক।
অনেকে প্রশ্ন করেন এতো অফার তারা কিভাবে দেয়?
হ্যাঁ এই সিস্টেম বিল্ড করতে তাদের অনেক স্ট্রাগল করতে হয়েছে এখনো করছে। শুরুতে অনেক ইনভেস্ট করতে হয়েছে বিগ বিগ অফার দিতে।
লাস্ট সেপ্টেম্বরে তারা শুধু বাইক ডেলিভারি দিয়েছে ৮০০০+। সারাদেশে কোন একটি বাইক কোম্পানির সব শোরুম মিলে ৮০০০ বাইক সেল দিতে কত দিন লাগতে পারে?
আর তারা যদি ১ ঘন্টায় ৮০০০ সেল জেনারেট করে দেয় কোন কোম্পানি কে তাহলে কয়েক মাসে সেল দেওয়া শোরুম এর ওই ৮০০০ এর প্রাইজ আর এই ৮০০০ এর প্রাইজ সমান রাখবে কোম্পানি?
আর এখন ত তাদের পলিসি তে আরো পরিবর্তন আনছে।তাদের লসের সম্ভাবনা একেবারেই নাই এখন। এখন সেলারদের থেকেও কমিশন নেয় শুরুতে ফ্রি ছিলো। এখন ক্যাশব্যাক এর টাকা খরচ করতে আপনাকে আরও ক্যাশ ইন করতে হবে সাধারণ গণিত পারলে হিসাব করে দেখেন তাদের কোন লস নাই। আপনিও বেনিফিটেড তারাও বেনিফিটেড। এই সিস্টেম তারা বিল্ড করে নিয়েছে গত দেড় বছরের পরিশ্রমে এবং শুরুতে ইনভেস্ট করে। তারা ইনভেস্ট করেছে গ্রাহকের পিছনে ।
সম্পুর্ন দেশীয় একটা প্রতিষ্ঠান ০ থেকে শুরু করে আজ দেশের হট টপিক।লাখ লাখ অনলাইন গ্রাহক ইভ্যালি তৈরি করেছে নিজ হাতে। বাইক থেকে শুরু করে প্রাইভেট কারের মতো দামি প্রোডাক্ট অনলাইনে কেনার মতো বিহেভিয়ার তৈরি করেছে ইভ্যালি। যা দেশের ভবিষ্যৎ ই কমার্স সেক্টরের জন্য বিশাল সম্ভাবনার ই ইঙ্গিত দেয়।
ই কমার্স প্রসেসিং টা একটু জটিল প্রসেস যদি গ্রাহক হয় কয়েক লক্ষ। তারা প্রতিনিয়ত তাদের সিস্টেম আপগ্রেড করছে। এর আগে দেশীয় ভাবে এত বিপুল সংখ্যক গ্রাহক সেবা দেওয়ার অভিজ্ঞতা কারো নেই বললেই চলে। তারাই প্রথম । এমনকি তাদের বিদেশি কোন এডভাইজার বা এমপ্লয় ও নেই যারা কিনা আলিবাবা,এমাজন বা ফ্লিপকার্ট এর মত জায়ান্ট ই কমার্স এর সাথে কাজ করেছে। তাই তাদের কাছে সমস্যা গুলোও নতুন এবং সমাধান ও নিজেদের ই করতে হচ্ছে যা সময় সাপেক্ষ।
তারা দেশীয় ডেভেলপার টিম নিয়ে কাজ করে ইভ্যালির পাশাপাশি আরো কয়েকটা সাইট দাঁড় করিয়েছে। তাদের বর্তমান ট্যাগ লাইন “লাইফ মনে ইভ্যালি” ই কমার্স সাইট ই ভ্যালির পাশাপাশি ই-ফুড,ই-বাজার,ই-খাতা সহ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে বিভিন্ন নতুন নতুন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছে। নিঃসন্দেহে এসব জায়গায় ও তাদের প্রচুর বিনিয়োগ যাচ্ছে।
সমস্ত কিছু অবজারভেশন করে অন্তত আমার কাছে মনে হয় না ইভ্যালি ভাগবে বা তাদের অন্য কোন ইন্টেনশন ছিলো বা আছে। সোনার ডিম দেওয়া রাজ হাঁসকে কেন একেবারে জবাই করতে যাবে কেউ?
আর যারা এম এল এম এর সাথে তুলনা করেন তারা দয়া করে গুগুল করে এম এল এম এর সংজ্ঞা টা জেনে নিবেন। ডেসটিনিও কিন্তু নিজে ভাগে নাই ডেস্টিনিকে ডিস্ট্রয় করা হয়েছে। ইভ্যালিও ভাগবে না যদি না ইভ্যালি দেশি বিদেশি কর্পোরেট মাফিয়াদের চক্রান্তে পড়ে শেষ হয়। তবে একটা কথা এই ধাক্কায় যদি ইভ্যালি টিকে যায় তাহলে ইভ্যালির আর পিছন ফিরে তাকাতে হবে না তাদের যে লক্ষ্য দেশ সেরা ই কমার্স হওয়া সেটা অনেকটাই সম্পুর্ন হয়ে যাবে।
সবশেষে বলতে চাই বেঁচে থাকুক দেশীয় শিল্প,দেশীয় প্রতিষ্ঠান। দেশের বুক চিরে হামলে পড়ুক বিদেশের মাটিতেও।
শুভ কামনা।