"হাওয়ায় ব্যবসা" বনাম "হাওয়ার ব্যবসা"
ছোট বেলার আলু ভাজিকে ঢাকায় এসে ফ্রেন্সফ্রাই বলা আর আলু ভাজিকে যাচ্ছে তাই খাবার আইটেম ভাবা বা চিনতে না পারাকে বিশাল গর্বের ব্যাপার মনে করা আবুল নিজেকে যত টা স্মার্ট ভাবে সে মোটেও ততটা স্মার্ট কিনা সেটা ভাব্বার বিষয় কিনা তা জানা নাই।
আবার কৃষকের ছেলে শহরে এসে রিকশাওলাকে ফাউল মনে করার যৌক্তিকতা কি তা নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে এই শহরে পা দিয়ে পর্যন্ত ।
এখন মনে হতে পারে এর সাথে টাইটেল এর সম্পর্ক কি?
মানে ধরুন কেউ একজন আপনার জমিতে আপনার চেয়ে উজ্বল একটি ঘর স্থাপন করে সেখানে থেকে, সেখান কার আলো বাতাস এ বেচে থেকে বলল, এই জমিটা আসলে কিছুই না, আমিই সব। তাকে কি আসলে আহম্মকের চেয়ে সম্মান জনক কিছু বলার সুযোগ আছে কিনা?
কোন একটা স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল দেখলাম ই-কমার্স ব্যবসাকে হাওয়ায় ব্যবসার সাথে তুলনা করেছেন। আক্ষরিক অর্থে এটা শুনতে সঠিক, তবে বাস্তবে এটাকে আসলে খোচা মারা হিসেবেই মনে করা উচিত আমরা যারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে আছি। এটা হিপোক্রেসির লেভেল এক এর একটি টাইটেল হয়েছে বলে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি।
আমি আবার কোন কিছু এমনি এমনি বলিনা। আসুন টেলিভিশন চলার মাধ্যম গুলি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক –
১। টেলিভিশন গুলির ব্রডকাস্ট মাধ্যম, স্যটেলাইট থেকে সিগ্ন্যাল ব্যবস্থাপনা, স্যাটেলাইট এর বিল প্রদান হাওয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।
২। পিছনে শুধু একটা সবুজ পর্দা রেখেই গোয়াল ঘরকে চকমকে স্টুডিও করতে যে সফটওয়ার গুলি ব্যবহৃত হয় তাও বোধকরি হাওয়ার মাধ্যমেই কেনা। পাইরেসি করা হলে হাওয়ার মধ্যে থেকে ডাউনলোড করা
৩। মিটিং করার সময় যে জুম ব্যবহার করা হলো বোধকরি সেটীও হাওয়ায় সেবা দেয়।
৪। বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ক্লিপ সংরক্ষনে যে সিকিউরিটী বা স্টোরেজ সেবা ব্যবহৃত হয় তাও বোধকরি হাওয়ার মাধ্যমেই সেবা প্রদান করে।
৫। টেলিভিশন চ্যানেল গুলি যে এড প্রচারের মাধ্যমে আয় করেন বোধকরি তারাও বাড়ী বাড়ী যেয়ে এড বলে আসেনা বা দেখিয়ে আসে না, তারাও এর জন্যে হাওয়ার সাহায্য নিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে পত্রিকা গুলি হয়ত হাওয়ায় ব্যবসা বলতে পারত, তবে তারো যেহেতু অনলাইন এ পোস্ট টোস্ট শেয়ার করে তাই তারা হয়ত এই ভুলটি করেন নি।
৬। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে যে একটা মডেল কে আমরা চিন্তা করি তা কিন্তু হাওয়ার উপর দেশ চলবে, তথ্যের দ্রুতগামিতা কিন্তু এই ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম মূল ভিতী। এই হাওয়ার মাধ্যমেই কিন্তু আমারা বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হবার সুযোগ পাচ্ছি।
এখন আমি একটু এই মকিং এর উত্তর দিতে চাই!
হাওয়াই ব্যবসা বলে অবজ্ঞা করা ব্যবসায়িক সেক্টরটি যে বিশ্বকে গ্রাস করে নিচ্ছে এই ব্যাপারে নুন্যতম পড়াশোনা থাকা প্রত্যেক সুনাগরিকের দায়িত্ব। আমি আমার জীবনের ২৬ টা বছর টেলিভিশন এ সংবাদ না দেখে কাটিয়েছি, আরো আজীবন পারব। কিন্তু, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, সফটওয়ার সেবা, ক্লাউড স্টোরেজ, সোস্যাল ইন্টারনেট সার্ভিসেস, সার্স ইঞ্জিন সার্ভিস ইত্যাদি বাদে জীবন টা কত সহজ হবে তা বুঝতে আমার তিন মাস পাগল থাকার জোগাড়। আমি আসলে কোন স্যার থেকে পড়াশোনা করে বি সি এস ক্যাডার হবার পর স্যার কিছু বুঝেনা টাইপ মনোভাবের চরম বিরোধী। আমাজন, গুগল, স্টার লিংক, আলিবাবা, টাওবাও, রাকুতেন সবাই হাওয়ায় ব্যবসায়ী। আপনার ইন্ডাস্ট্রির ৬০ নির্ভরতাও হাওয়ার উপরে। এখন কার সময়ে অনেক খবরই তো আপনারা হাওয়ায় তৈরি করে ফেলেন, তার পরেও সেগুলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভেবে রাস্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে আপনাদের আমরা কত সম্মান করি। ভবিষ্যৎ এও করবো। একটা ব্যাপার কিন্তু ঠিক সঠিক ভাবে এই এই হাওয়ায় ব্যবসা করতে একটু জানা লাগে, সরাসরি স্ক্রিপ্ট পড়ে বা আগে থেকেই নিজের মন মত করে কিছুই করার সুযোগ এই হাওয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে নাই। আমরা হাওয়ায় ব্যবসা করি। আপনারা হাওয়া বিক্রি করেন। এর পরেও পৃথিবীর কোন কাজই যেহেতু ছোট না, তাই আপনার পেশার প্রতি সম্মান রয়ে গেল, থাকবে। আমি জানি আপনারাই সেই সমাজ যারা বাবার মত রিকশাওয়ালাকে ৫ টাকার জন্য থাপ্পর দেন। মানবিক পজিশনের চেয়ে চেয়ারের সম্মান করতে করতে আমরা সবাই আসলে পচে গেছি। নাহলে টয়লেট সাফ করা ব্যক্তিটির ব্যবসাকেও পরিবেশ পরিশোধনের জন্য বিশেষ সম্মান আমরা দিতে পারতাম। যাই হোক এই হাওয়ায় ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত বিশ্ব নিয়ে পড়াশোনা করে তার পর কমেন্ট করতে অনুরোধ করব। এই টাইটেল টি আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। আমি মনে করি আমাদের সবার এই ব্যাপারে ঐক্য থাকা জরুরী। কোন একজন প্রোগ্রাম স্ক্রিপ্ট রাইটার কখনোই একটা পুরো পরিবারের সাথে এরকম অসদাচরন করতে পারেন না। যাইহোক যে পেশায় হোক আপনার এই পেশাকে আমি যথাযথ সম্মান ও ধন্যবাদ দিয়ে রাখলাম।
দোয়া রাখবেন একসময় যেন এই হাওয়ার কোন সার্ভিস প্যাকেজ দিয়েই আপনাদের সেবা চলতে পারে। দেশি হাওয়ার একটি বড় পদক্ষেপ ইতিমধ্যে সফল, আমি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট এর কথায় বলছি।