Tuesday, December 3, 2024
EvalyNews

নতুন কমিটির মাধ্যমে ইভ্যালি নতুন করে চালুর সম্ভাবনা

নতুন কমিটির মাধ্যমে ইভ্যালি নতুন করে চালুর সম্ভাবনা

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল গ্রেপ্তারের পর পেরিয়ে গেছে এক বছর। গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর অক্টোবরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ইভ্যালি পরিচালনার দায়িত্ব নেয় পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি। এই কমিটিকে ইভ্যালির দায়দেনা নিরূপণ করে প্রতিষ্ঠানটি চলবে নাকি বন্ধ করে দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে মতামত দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। কিন্তু সেই কাজ শেষ করতে পারেনি কমিটি। জানা যায়নি ইভ্যালির পূর্ণাঙ্গ দায়দেনার পরিমাণ। কাজ অপূর্ণ রেখেই বিদায় নিতে চলেছে আদালতের নির্ধারণ করে দেওয়া ইভ্যালির পরিচালনা কমিটি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ মাসেই আসতে পারে নতুন পর্ষদের ঘোষণা।
 
ইভ্যালি পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা আগামী ২০-২২ তারিখের দিকে আদালতে আমাদের মতামত জমা দেব।’
 
তবে পর্ষদের একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে জানান, ইভ্যালির সার্ভারের পাসওয়ার্ড না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ দায়দেনার পরিমাণ জানা সম্ভব হয়নি। তাই আদালত তাঁদের যে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তা একরকম অসম্পন্ন অবস্থায় রেখেই তাঁদের দায়িত্ব ছাড়তে হচ্ছে।
 
কারা আসছেন নতুন কমিটিতে
 
ইভ্যালির বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ও ইভ্যালির আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন কমিটিতে থাকবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) একজন করে সদস্য। আর মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তাঁর মা ও বোনের স্বামীকে কমিটিতে রাখা হবে ৷
 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল) মো. সাঈদ আলী এ বিষয়ে বলেন, ‘উচ্চ আদালত ইভ্যালির নতুন কমিটিতে একজন প্রতিনিধির নাম প্রস্তাব করতে বলেছেন। আমরা কয়েক দিনের মধ্যেই নাম প্রস্তাবের চিঠি দেব।’
 
ই-ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক (দাপ্তরিক) জাহাঙ্গীর আলম শোভন বলেন, ‘ইভ্যালির কমিটিতে থাকার জন্য আমাদের একজন প্রতিনিধির নাম চাওয়া হয়েছে। আমরা সেটা পাঠিয়েও দিয়েছি।’
 
জানা গেছে, ই-ক্যাব থেকে সংগঠনটির সহসভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
 
দুদকের উপপরিচালক রশীদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখন আর ইভ্যালি নিয়ে তদন্ত করছি না। ইভ্যালির অনুসন্ধানকাজ সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
 
সিআইডির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইভ্যালির বিষয়ে তদন্ত প্রায় গুছিয়ে এনেছেন তাঁরা ৷
 
মোহাম্মদ রাসেলের আইনজীবী আহসান হাবীব জানান, সারা দেশে চেক ডিজঅনারসহ মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে ৩০০টির মতো মামলা আছে। এর মধ্যে প্রায় সব মামলারই জামিন হয়ে গেছে ৷ ১২টির মতো মামলায় জামিন পাওয়া বাকি আছে।
 
সিআইডি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মহানগরের থানাগুলোতে ইভ্যালির গ্রাহকদের প্রতারণা মামলা হয়েছে ৯টি, সিআইডি তদন্ত করছে ৪টি। আর ধানমন্ডি থানা ৫টি মামলা তদন্ত করছে। এ ছাড়া পিবিআইও ইভ্যালির কিছু মামলার তদন্ত করছে।
 
গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে মোহাম্মদ রাসেল এখনো কারাগারেই আছেন। আর গত ৬ এপ্রিল জামিনে মুক্তি পান শামীমা নাসরিন।
 
তবে মোহাম্মদ রাসেল গ্রেপ্তারের পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এক টাকাও ফিরে পাননি গ্রাহকেরা। মোহাম্মদ রাসেলকে গ্রেপ্তারের পর র‍্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, ইভ্যালির দেনার পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো পূর্ণাঙ্গ হিসাব পাওয়া যায়নি৷
 
ইভ্যালির পরিচালনা পর্ষদের তথ্যমতে, প্রতিষ্ঠানটির ২৫ কোটি টাকার পণ্য রয়েছে।
 
আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ৯টি পেমেন্ট গেটওয়ে এবং ব্যাংক হিসাবে ইভ্যালির ২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা আটকে আছে ৷ গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের দাবি, গেটওয়েতে আটকে থাকা টাকাগুলো তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
 
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের দায়িত্বে থাকা সাঈদ আলী বলেন, ‘আটকে থাকা টাকাগুলোর মধ্যে কার কত টাকা, সেটা না জেনে ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা আশা করছি টাকা ফেরত দেওয়ার কাজ শুরু করতে পারব।’
 
নতুন কমিটির দিকে তাকিয়ে ইভ্যালির গ্রাহকেরাও। ইভ্যালির গ্রাহকদের একটি সংগঠনের সমন্বয়ক সাকিব হাসান বলেন, ‘আমরা নতুন কমিটির দিকে তাকিয়ে আছি। আশা করছি, ইভ্যালি নতুন করে চালু হলে আমরা গ্রাহকেরা আমাদের টাকা ফিরে পাব।’
 
তথ্য সূত্রঃ আজকের পত্রিকা
Rate this post