Site iconSite icon Evaly Fan's Club

বিনিয়োগকারীর সন্ধানে ইভ্যালি: টাকা পেতে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে গ্রাহকদের

বিনিয়োগকারীর সন্ধানে ইভ্যালি: টাকা পেতে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে গ্রাহকদের

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি গত বছরের সেপ্টেম্বরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতদিন ধরে ইভ্যালির প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহক টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে ছিলেন চরম অনিশ্চয়তায়। এক বছর পর আবারও ইভ্যালি চালুর তোড়জোড় চলছে।
 
এতে সাধারণ গ্রাহক ও মার্চেন্টরা যে ৪০০ কোটি টাকা পাবেন ইভ্যালির কাছে সেটিও ফিরে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। তবে টাকা ফেরত পেতে অন্তত এক বছর অপেক্ষা করতে হবে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের। আগামী একটি বছর ব্যবসা করে তবেই টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু করতে পারে প্রতিষ্ঠানটি। ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ এবং গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
 
আগামী ১৫ অক্টোবর আবারও পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এখনও তহবিল সঙ্কট কাটেনি ইভ্যালির। এ জন্য নতুন বিনিয়োগকারীর সন্ধানে নেমেছে ইভ্যালি কতর্হৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলোচনা জোরেশরে চলছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা টাকা ফেরত পাওটার বিষয়টিও নির্ভর করছে এই বিনিয়োগকারী পাওয়ার ওপর।

‘ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন কমিটির’ কো-সমন্বয়ক সাকিব হাসান বলেন, টাকা ফেরত পাওয়ার পাশাপাশি ইভ্যালির এমডি রাসেলের মুক্তির বিষয়েও তারা আন্দোলন করে আসছিলেন। টাকা ফেরত পাওয়া এবং ইভ্যালির বর্তমান কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে সাকিব হাসান সময়ের আলোকে বলেন, ‘ইভ্যালি বন্ধ হওয়ার পর থেকে গত এক বছর ধরেই আমরা একটি বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিয়ে বলেছি যে, ইভ্যালি তার কার্যক্রম শুরু করতে পারলে তবেই আমরা আমাদের টাকা ফেরত পেতে পারি। প্রতিষ্ঠান যদি বন্ধই থাকে এবং প্রতিষ্ঠানের এমডি- চেয়ারম্যান যদি জেলে থাকেন তাহলে আমাদের টাকা কে দেবেন। সুতরাং আমরা এ বিষয়ে জোর দিয়ে আসছিলাম। গত এক বছরে হাইকোর্ট কর্তৃক বোর্ড গঠনসহ নানা পদক্ষেপের পর আবার ইভ্যালি চালু হতে যাচ্ছে। ইভ্যালি আবার চালু হচ্ছে-এতেই আমরা খুশি।’

ইভ্যালি চালু হলেই আপনারা টাকা ফেরত পাবেন এ নিশ্চয়তা কে দিল বা কতটা আশাবাদী হচ্ছেন-এ বিষয়ে সাকিব হাসান বলেন, ‘ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনসহ পাঁচজনের নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠন করে দিয়েছে সরকার। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-ক্যাবের প্রতিনিধিও আছে। শামীমা নাসরিনসহ এই বোর্ডের অনেকের সঙ্গেই আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। বিশেষ করে শামীমা নাসরিনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এর মধ্যে আমরা তাকে নিয়ে গত ৭ অক্টোবর একটি ভার্চুয়াল মিডয়া ব্রিফিংয়ের আয়োজন করি। সেখানে শামীমা নাসরিন ইভ্যালির নতুন কার্যক্রম সম্পর্কে অনেক ধারণা দিয়েছেন। তিনি সে দিন ঘোষণা দিয়েছেন ১৫ অক্টোবর থেকে ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে আবারও পণ্য বিক্রি শুরু হবে। যেহেতু আবার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, সেহেতু আমরা এখন টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে শামীমা নাসরিন বলেছেন, আগামী একটি বছর ভালোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে তবেই আগের গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তারা বিনিয়োগকারীর সন্ধান করছেন। আমাদের টাকা ফেরত পাওয়া বিনিয়োগকারী পাওয়ার ওপরও অনেকখানি নির্ভর করছে। তবে আমরা যতটা শুনতে পাচ্ছি, দেশি-বিদেশি অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইভ্যালিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সুতরাং বিনিয়োগ এলে আবার ঘুরে দাঁড়াবে ইভ্যালি-এটা আমাদের আশা।’

বিকল্প সার্ভার দিয়ে চালু হচ্ছে ইভ্যালি
ইভ্যালির সার্ভারের আগের পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির এমডি মোহাম্মদ রাসেল জেলে থাকায়। তাই ইভ্যালিকে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করতে হচ্ছে বিকল্প আরেকটি সার্ভার খুলে। ইভ্যালির একটি বিশ্বস্ত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইভ্যালি আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে আবারও পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করবে এই নতুন সার্ভার দিয়ে। ইতোমধ্যে ইভ্যালির অফিসিয়াল ফেসবুকে এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।
 
বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘ইভ্যালি-ক্যাম্পিং, ১৫ অক্টোবর থেকে নতুন পণ্য বিক্রি করতে যাচ্ছে ইভ্যালি।’ সেখানে একটি বিজ্ঞাপনের ছবিও দেওয়া হয়েছে, যাতে লেখা রয়েছে-লাইফ মানে ইভ্যালি।
 
ইভ্যালি সূত্রে জানা গেছে, আগের মতোই সব রকম পণ্য নিয়েই নতুন করে অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা চালু করেছে ইভ্যালি। আর নতুন কার্যক্রম সঠিকভাব পরিচালনার জন্য আগের কর্মীদের একটি অংশ ইতোমধ্যে ইভ্যালির ধানমন্ডিস্থ প্রধান কার্যালয়ে অফিস করা শুরু করেছেন বলে জানা গেছে
আরও জানা গেছে, নতুন করে কার্যক্রম শুরু করার পাশাপাশি ইভ্যালির এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে কারামুক্ত করতেও বেশ তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান কর্তাব্যক্তিরা।
 
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ইভ্যালির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 
তবে গত ৭ অক্টোবরের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমরা ক্যাশ অন ডেলিভারি, পিক অ্যান্ড পে এবং ক্যাশ বিফোর ডেলিভারিতে পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমরা মুনাফা না করে একটি পণ্যও বিক্রি করব না। সেই সঙ্গে ক্রেতার পণ্য ক্রয়ের অর্থ সরাসরি বিক্রেতা সংগ্রহ করবে।’
এদিকে নতুন করে পথ চলার পথে যাতে আবারও কোনো ভুল না করে বা অবৈধভাবে ব্যবসা না করে কিংবা ক্রেতা না ঠকায় সে বিষয়গুলো কঠোরভাবে মনিটরিং করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাব।
 
এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইআইটি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম আহাদ আলী খান সময়ের আলোকে বলেন, ‘নতুন করে ইভ্যালি কীভাবে চলবে, কীভাবে তারা ব্যবসা পরিচালনা করবে সে লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। সে গাইডলাইন মেনে ব্যবসা করতে হবে ইভ্যালিকে। সুতরাং ইভ্যালি নতুন করে শুরু করার পর তার সব কার্যক্রম পুরোপুরি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকেও ইভ্যালির নতুন বোর্ডে রাখা হয়েছে।’
 
এ ছাড়া ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল সময়ের আলোকে বলেন, ‘ই-ভ্যালি নতুন করে চালু করতে সরকার বোর্ড করে দিয়েছে। এতে ই-ক্যাবেরও প্রতিনিধি রয়েছেন। তার অর্থ হলো, ইভ্যালি আবার চালু হলেও ই-ক্যাবেরও কড়া নজরদারি থাকবে।’
 
/জেডও/সময়ের আলো
Rate this post
Exit mobile version