ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে আটকে থাকা টাকা ফেরত দিতে কমিটি গঠন
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে আটকে থাকা টাকা ফেরত দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে একটি কমিটি গঠন করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান আজ রোববার কারওয়ান বাজারে সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি এবং পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা অর্থ পরিশোধের অগ্রগতিবিষয়ক পর্যালোচনা সভায় এ কথা জানান।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, যে টাকা পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে ছিল, তার মধ্যে ৪০৭ কোটি টাকা গ্রাহকদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ১২৭ কোটি টাকা এখনো ফেরত দেওয়া যায়নি। যে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে। এরপর সুপারিশসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হবে। অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মন্ত্রণালয়।
ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘ই- কমার্স খাত থেকে অনেক টাকা পাচার হয়ে গেছে। তিন বছর ধরে কাজ করেও অনেক বিষয় সমাধান করা যায়নি। ই-অরেঞ্জ ও ধামাকার মতো প্রতিষ্ঠানের কোনো হদিস এখনো নেই। এর মধ্যে ধামাকা ২০০ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ জন্য ই-অরেঞ্জ বা ধামাকার মতো প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সমাধান দেওয়া ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষে সম্ভব নয়।’
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল যাঁরা ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই বিদেশে পালাতক। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাঁদের নিয়ে আসা গেলে এসব সমস্যার হয়তো কিছু সমাধান দেওয়া যেতে পারে।
তিনি বলেন, মামলা জটিলতায় আটকে থাকা অর্থ ফেরত দিতে নতুন কমিটি করা হবে। এই টাকাগুলো কেন দেয়া যায়নি, কমিটি তা ১৫ দিনের মধ্যে জানাবে।
সভায় উপস্থিত ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘অতীত নিয়ে কথা বলতে চাই না। অতীতে অনেক ভুল ছিল। সেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার ব্যবসায় ফিরেছি। গ্রাহকেরা অর্ডার করছেন। ব্যবসায় ফিরে ৫০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। সব টাকা ফেরত দিতে চাই। সে লক্ষ্যে ব্যবসা করছি।’
আরো বলেন, বিভিন্ন সময় আপনাদের সামনেও দুঃখ প্রকাশ করেছি, যে সামগ্রিকভাবে আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিল এবং যেটা ঘটেছে দুইটা আসলে ম্যাচ করেনি এবং সেই জন্য আমরা সব সময় দুঃখ প্রকাশ করি। আর আমরা কিন্তু আমাদের জায়গা থেকে সচেতন ছিলাম, যেমন একটা আইডি থেকে একটা বাইক অর্ডার করা যেত। এখন কেও ১০০ টা আইডি করে ১০০ টা অর্ডার করেছে সেটা আসলে তখন আমরা মনিটর করতে পারিনি। আরেকটা জিনিস আমাদের যে ভুলটা হয়েছে, আমরা ই-কমার্সের প্রসারের জন্য যেই এই ছাড় দিয়ে বিজনেস প্রসার করা এবং বিনিয়োগ আনতে ব্যর্থ হওয়া এই জায়গার জন্য যে সমস্যা হয়েছে সেজন্য অবশ্যই আমরা দুঃখিত। কিন্তু একটা জিনিস জানেন একজন হয়তো পেয়ে গেছেন আরেকজন পান নাই। আল্টিমেটলি বেনিফিশিয়ারি কিন্তু আমরাই উদ্যোক্তারা ছিলাম না। হয়তো আপনি পান নাই, আপনার ফ্রেন্ড হয়তো দুটাই পেয়ে গেছে। সামগ্রিকভাবে অতীত নিয়ে যদি বলেন, আমাদের এক কথায় বলতে হবে আমরা অতীত নিয়ে দুঃখিত। কিন্তু অতীতকে আমরা গুছিয়ে নতুন করে সমাধান করতে চাচ্ছি। গ্রাহকরা কিন্তু এখন কেনাকাটা শুরু করেছেন তাই ইভ্যালি ভোক্তা অধিকারের মাধ্যমে গ্রাহকদেরকে প্রায় ৫০ লাখ টাকা দিছে।
আপনার আস্থা রাখুন এই আমাদের জন্ম, আমাদের কার্যক্রম সব কিছুর একটাই উদ্দেশ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শফিকুজ্জামান স্যারের নেতৃত্বে আমরা দেশের ই-কমার্সের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখব। ভবিষ্যতে কোনো ধরনের কারো কোন ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। যারা টাকা পায় তারা ফেরত পাবে। এর মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দিয়ে দিয়েছি আম্মাদের মুনাফা থেকে। এই ৫০ লাখের বাহিরেও কিছু টাকা দেওয়া লাগছে, যারা বেশি অসুস্থ কিংবা জটিল অবস্থায় আছে এবং এই তথ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়ে দিয়েছি। যারা টাকা পায় তাদের টাকা অবশ্যই পাবেন, শুধু একটু সময় লাগতে পারে এবং যেহেতু একটা এক্সিডেন্ট, মানে ধরেন আমার হাত ভেঙে গিয়েছিল, এখন ঐ হাত দিয়ে কাজ করতেছি, একটু সময় লাগতেছে কিন্তু জোড়া লাগবে, আর আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে আমরা সকলে টাকা ফেরত দিব। একদম কনফার্ম থাকতে পারেন এবং আমরা এই ক্ষেত্রে বাণিজ্যমন্ত্রী অন্য সহযোগিতা পাচ্ছি।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইক্যাব) ও বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।