তাহলে মোটিভটা আমরা দেখি একটু :
ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যান তো পালিয়ে যেতে চাননি, অন্তত এমন কোনো উদ্দেশ্য কেউ প্রমাণ করতে পারেননি এখনও। বরং তাদের পাসপোর্ট জব্দ ছিলো তারা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিতেও ছিলেন।
ইভ্যালির ফরম্যাটের ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে কোনো এমএলএম জাতীয় কার্যক্রম করেনি ইভ্যালি (এমএলএম সংক্রান্ত আইনি কাঠামো অনুসারে ইভ্যালির ফর্মূলা অভিযুক্ত হয়নি), দীর্ঘ সময়ে এটা শুধু একটা শ্রেণী নানাভাবে বলে গেছেন যে, ওটা ওমন- কিন্তু সত্যিই তা কোনো বেইজে প্রমাণিত হতে দেখিনি। এটা প্রমাণ হলে তার জন্য তো পৃথক আইনই ছিলো।
এছাড়া ইভ্যালির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, টাকা পাচার বা অন্য কোনো অপরাধও পাওয়া যায়নি, অন্তত আমরা দেখিনি এখনও। যেগুলো, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ অন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে। অথচ কথায় কথায় এদের সঙ্গে ইভ্যালিকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে।
সবচেয়ে দেখার বিষয় যে, ইভ্যালি কী করেছে সেটা খুব পরিস্কার।
ইভ্যালি বেশ আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট দিয়ে বেশ পণ্য বিক্রি করেছে এবং এই বিকিকিনির টাকা দিয়ে সে এগ্রেসিভভাবে বাজার দখল করেছে । একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের টাকা গ্রাহককেই ফিরিয়ে দিয়েছে, বিপণন-প্রচারণায় ব্যয় করেছে, বিভিন্ন জাতীয়-আঞ্চলিক আয়োজনে স্পন্সর করেছে, ব্যবসার পরিসর ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে।
আমরা এখানে দেখছি, সেই ২০২০ সালের আগস্ট হতে এখন পর্যন্ত বছরব্যাপী বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর কোনো তদন্তে তাদের বেআইনি কার্যক্রমও প্রমাণিত হয়নি। একইভাবে এতোকিছুর পরও কোনো গণমাধ্যম কিন্তু কোনো আইনি তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এগুলো বলতে পারেনি, এখন পর্যন্ত অন্তত দেখিনি।
‘সমস্যা তৈরি হওয়া পর ইভ্যালি বলে আসছে তাদের নিয়ন্ত্রণ, মনিটরিং ও শাসনে রেখে সময় দেন, যা দেনা জমেছে সব শুধিয়ে দেবে তারা। আর এটাই ইতোমধ্যে তারা শুরুও করছিলো বলে দেখেছি। যেখানে বর্তমানে যে নিয়ম-নীতি চালু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থার যে মনিটরিং সেখানে গ্রাহকদের এক শতাংশও ঝুঁকি কিন্তু নেই।
অন্যদিকে ইভ্যালি কোনো নিষিদ্ধ প্রডাক্ট বিক্রি করে না, কোনো নকল প্রডাক্ট না, কোনো মজুদদারি-বাড়তি দামের ব্যবসা না, ইভ্যালি এখন গ্রাহককে আগে প্রডাক্ট দেয় তারপর টাকা পায়, পুরোনো জমে থাকা পণ্য ডেলিভারি দেয়া শুরু করছে, গ্রাহক-মার্চেন্টদের টাকা অল্প অল্প করে দিতে শুরু করেছে। ৫ মাস সময়ই চেয়ে আসছে সে।
আমরা কী দেখলাম, যত সমস্যা এই সময় দেয়া নিয়েই।
হুট করে একজন ডাক্তার ডিগ্রিধারী উপস্থাপক হতে ই-কমার্স বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠা এক ব্যক্তি, কিছু তথাকথিত সোশ্যাল সেলিব্রেটি, ‘কিছু মিডিয়া ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ব্যাপক ‘এক্টিভিটি’ দিয়ে জোর করে তাদের একটা পারসেপশন প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা আমরা দেখে চলেছি।
তারা অনেকটা সফলও, ‘ইভ্যালি কেলেঙ্কারি, বাটপার ই-কমার্স, প্রতারক ইভ্যালি, পঞ্জি স্কিম ইত্যাদি শব্দ ও ট্যাগ তারা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আলোচনা শুরু হলেই তারা ডেসটিনির তুলনা দিয়ে শুরু করেন। ইদানিং ইভ্যালির ৭ কারণ, পক্ষে-বিপক্ষে এমন নানা টোটকাও দিতে দেখি আমরা।
কিন্তু এই পারসেপশন আর রিয়েলিটি যে এক না সেটা তো দেখা যাচ্ছে। সারাদেশে হাজার হাজার গ্রাহক-মার্চেন্টরা যুক্তিযুক্তভাবে ইভ্যালির স্বপক্ষে কথা বলছেন, তারা আইন-কানুনের মধ্যে ইভ্যালি এগিয়ে যাক সেটা চাইছেন। আসলে প্রবল এই প্রচারণার ক্ষমতার বিপরীতে হয়তো এই রিয়েলিটি প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লাগবে, কিন্তু এক সময় এটা হবেই।
দুনিয়া জুড়েই আমরা দেখি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের নতুন নতুন পদ্ধতিগুলোতে বেশিরভাগ সময়ই বিশ্বে চলমান আইন কাভার করে না। নতুন নতুন আইন হয়, নীতিমালা হয়। এসব ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদ্ধতিগুলো পুরোনো পদ্ধতিগুলো হতে রূপান্তরিত হয়ে নতুন আইনে চলতে শুরু করে।
আমরা আমাদের দেশের উবারের যাত্রাটাই দেখতে পারি। উবার দেশে চালু হওয়ার কয়েকদিন পরেই বিআরটিএ তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কারণ দেশের প্রচলিত আইনে তাদের জন্য গাইডলাইন ছিলো না। পরে তাদের নিবন্ধনসহ তারা কীভাবে চলবে সেই নীতিমালা করা হয়।
ইভ্যালির ক্ষেত্রেও ঘটনাটা তাই।
ইভ্যালি নিশ্চিতভাবেই এতোদিনে বড় বিনিয়োগও পেতো। এখন আমরা দায়িত্বশীল পর্যায়ে অনেককে বলতে শুনি সেই সুযোগ ও সম্ভাবনাটা ইভ্যালিকে কাজে লাগাতেই দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি যেনো বিনিয়োগ না পায় তার সব আয়োজনই তো করতে দেখি আমরা।
আর এতো নেগেটিভ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচার-প্রচারণা ও চাপের মধ্যে আদৌ কারও পক্ষে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা সম্ভব কী ?