Monday, November 25, 2024
E-CommarceEvaly

‘আলিবাবা অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হতে চায় ইভ্যালি’

‘আলিবাবা অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হতে চায় ইভ্যালি’

   দেশের এক কোটি মানুষকে ই-কমার্স গ্রাহক তৈরিতে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ রাসেল। তার আশা, ইভ্যালি একদিন আলিবাবা অ্যামাজনের মতো কোম্পানি হবে। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ১৬ কোটির মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষকে ই-কমার্সের আওতায় আনা। সম্প্রতি বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হয়ে মোহাম্মদ রাসেল দেশে ই-কমার্সের সার্বিক পরিস্থিতি, বাজার উন্নয়ন, ইভ্যালির বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন।

আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ বাংলা ট্রিবিউন থেকে নেওয়া…

প্রকাশঃ ১৭ মার্চ ২০২০

বাংলা ট্রিবিউন: দেশে ই-কমার্সের সার্বিক চিত্র কেমন দেখছেন?

মোহাম্মদ রাসেল: ২০১৮-২০১৯ এই দুই বছর দেশে ই-কমার্সে একটা বড় পরিবর্তন এসেছে। ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এই খাত সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স আলিবাবা দারাজে বিনিয়োগ করার পর থেকে তারা এ দেশে ই-কমার্সে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি আমরাও বড় একটা পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি। আমরা মনে করি, বর্তমানে ৩০ লাখের মতো ‘বেস্ট কাস্টমার’কে সাপোর্ট দিতে পারছি। এটা যদি এক কোটির দিকে যায় তাহলে বলা যাবে যে এই খাতকে মোটামুটি একটা ভালো পর্যায় নিয়ে যেতে পেরেছি। এই খাতে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। বিভিন্ন বিষয়ে অনেক সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি যদি বলি, আমাদের গ্রোথ বাড়ছে। বাজার আগের চেয়ে বড় হয়েছে, ক্রেতা বেড়েছে। বিদেশি বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এ দেশে আসছে। 

আগে ঠিক কতজন, কত টাকার পণ্য কিনত? ইভ্যালি আসার আগে যে ফিগারটা ছিল, সেই ফিগারটা বড় হয়েছে কিনা। আগে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বড় ক্যাম্পেইনে লেনদেন হয়তো ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মতো। আমরা মার্কেটে আসার পর সেই ফিগারটা এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মতো হচ্ছে, প্রতি মাসে

বাংলা ট্রিবিউন: আপনারা বাজারে আসার পরে এই খাতের উন্নয়ন কেমন হয়েছে বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ রাসেল: আমরা বাজারে আসায় রেভিনিউ ভলিউমে (রাজস্ব আয়) পরিবর্তনটা হয়েছে। ধরুন, আমরা বলি- আগে ঠিক কতজন, কত টাকার পণ্য কিনত? ইভ্যালি আসার আগে যে ফিগারটা ছিল, সেই ফিগারটা বড় হয়েছে কিনা। আগে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বড় ক্যাম্পেইনে লেনদেন হয়তো ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকার মতো। আমরা মার্কেটে আসার পর সেই ফিগারটা এখন ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মতো হচ্ছে, প্রতি মাসে। বর্তমানে ই-কমার্সের বাজার আকার মাসে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার মতো।

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের মনে হয়েছে আপনারা ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে বেশি মনোযোগী। আপনারা ‘প্রোডাক্ট ডেলিভারি’র দিকে কতটা মনোযোগী?

মোহাম্মদ রাসেল: ব্র্যান্ডিং আর প্রোডাক্ট ডেলিভারির বিষয়ে মনোযোগ একই ধারায় চলে না। ব্র্যান্ডিং অনেকটা সিস্টেম্যাটিক একটা বিষয়। ব্র্যান্ডিং চাইলেই আমি করতে পারি। কিন্তু ডেলিভারি হলো একটা প্রসেস। যে প্রসেসে পুরো ই-কমার্স ইকোসিস্টেম জড়িত। ডেলিভারির সঙ্গে সাপ্লাই, লজিস্টিক ইত্যাদি রয়েছে। আমরা যখন একটা সাপ্লাইয়ারের সঙ্গে কাজ করি তখন তারা এই ডেলিভারির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তারা জানতো না কীভাবে ই-কমার্সের সঙ্গে ডিল করতে হয়। ই-কমার্সের পেমেন্ট সিস্টেম কীভাবে হবে, ই-কমার্সের ডেলিভারি প্রোডাক্টগুলো কীভাবে দেবে। নতুন সিস্টেম যখন ডেভেলপ হয়েছে তখন এই সিস্টেমের সঙ্গে ক্রেতাদের মানিয়ে নিতে যে সময়টা লাগছে সেই সময়ের মধ্যে আমাদের ডেলিভারি চ্যালেঞ্জগুলো সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা অনেক সময় প্রোডাক্ট সাপ্লাইয়ারের স্টক জানতে পারি না। তারা হয়তো ফ্যাক্টরিতে যে উৎপাদন হচ্ছে সেটা দিয়ে দিচ্ছে। আমরাও অনেক সময় ধারণা করতে পারি না এতগুলো অর্ডার পড়বে। এই যে মার্কেট ফিডব্যাক বা সাপ্লাইয়ারের সক্ষমতা, এই বিষয়গুলো একটা শিক্ষণীয় ব্যাপার। ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কিন্তু শিক্ষণীয় কিছু ছিল না। আমি চাইলে ক্রিকেট খেলায় বিজ্ঞাপন দিতে পারি। কিন্তু ই-কমার্সের যে ডেলিভারি সিস্টেম সেটা আমি আজকে চাইলে কালই সব ঠিক করে ফেলতে পারবো না। এটা আমাদের সামলাতে হয় বিভিন্নভাবে।

বাংলা ট্রিবিউন: ই-কমার্সকে শক্তভিত্তি দিতে ইভ্যালি কি করতে পারে? কোনও পরিকল্পনা আছে কি?

মোহাম্মদ রাসেল: দেখুন, এটাকে যদি বাজার বলি তাহলে বাজারের প্রাণ কি? বাজারের প্রাণ হচ্ছে ক্রেতা ও বিক্রেতা। প্রচুর ক্রেতা, প্রচুর বিক্রেতা না থাকলে কোনও বাজারই জমে না। সেটা যেকোনও বাজারই হতে পারে। ই-কমার্সও এক ধরনের বাজার। এখানেও প্রচুর ক্রেতা ও বিক্রেতার প্রয়োজন। আমরা (ইভ্যালি) এই জায়গাটাতে সফল বলে মনে করি। ক্রেতাদের সেবা হয়তো আমরা কাঙ্ক্ষিতভাবে দিতে পারিনি। তবে প্রচুর ক্রেতা আমরা এখানে আনতে পেরেছি। বিভিন্ন ধরনের ‘প্রোডাক্ট প্রমোশন’ করে অসংখ্য বিক্রেতাকেও আমরা আনতে পেরেছি। যারা ভালো একটা ছাড় দিয়ে বিশাল ‘সেল’ (পণ্য বিক্রি) পাচ্ছেন। ফলে বিক্রেতারাও যেমন সেল পাচ্ছেন, তেমনি ক্রেতারাও সেই পণ্য বিশাল ছাড়ে কিনে অনেক বড় সুবিধা নিতে পারছেন।

ইভ্যালি একটা মার্কেটপ্লেস। আমরা হয়তো বাইকে আজ ১০ হাজার টাকা লস করছি। কিন্তু আমরা অন্য একটি পণ্য যেমন টিভি বিক্রি করে ২ হাজার টাকা লাভ করছি। আমাদের এখানে অনেক পণ্য আছে যেগুলোতে কোনও ছাড় থাকে না। সেগুলো বিক্রি করে আমরা লাভ করছি। ওভারঅল লাভ ও ক্ষতি যখন হিসাব করা হয় তখন দেখা যায় লাভের পাল্লাই ভারি

বাংলা ট্রিবিউন: ইভ্যালির পণ্য, পণ্য পৌঁছানোর সময় ইত্যাদি নিয়ে নিয়ে অনেক অভিযোগ শোনা যায়।

মোহাম্মদ রাসেল: বিষয়টা খুবই সাধারণ। প্রথমে যে বিষয়টা আসে সেটা হলো, আমরা কেন এত ছাড় দিই, কীভাবে দিই? ছাড় দিতে আমরা প্রথমে চিন্তা করি মুনাফা করা যাবে না। আমরা যেটা করি তা হলো সাপ্লাইয়াররা (পণ্য সরবরাহকারী) যে রেট দেয় সেটা থেকে প্রাথমিকভাবে আমরা কোনও মুনাফা করার পরিকল্পনা করি না। আমাদের একটা সুবিধা হচ্ছে, আমরা একসঙ্গে অনেক পণ্য কিনি। একবারে কেনার কারণে আমরা বাড়তি একটা ছাড় পাই। বাড়তি ছাড় পেতে আমরা ওই ছাড়টা ‘স্যাক্রিফাইস’ করে ক্রেতাদের কাছে সংশ্লিষ্ট পণ্য বিক্রি করি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা লসেও পণ্য বিক্রি করি। সেটাকে আমরা লস (ব্যবসায়িক ক্ষতি) মনে করছি না, মনে করছি বিনিয়োগ। আমরা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট স্পন্সর করছি, টিভিতে বিজ্ঞাপন দিচ্ছি, বিলবোর্ডে দিচ্ছি- এসবই আমাদের বিনিয়োগ। বিশাল ছাড় দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো বেশি ক্রেতা পাওয়া। ক্রেতা যদি একটা পণ্যে বড় ধরনের ছাড় পেয়ে আরও ১০ জনকে বলে নিয়ে আসতে পারে তাহলে সেটাকে আমরা লস বলছি না। সেটা আমাদের ‘রিসেল’। তিনি হয়তো আমাদের কাছে থেকে মোটর বাইকে ছাড় পাচ্ছেন কিন্তু তার কাছেই আমরা একটা টিশার্ট বিক্রি করে লাভ করছি। আর আমরা তো সব পণ্যে ছাড় দিই না। কিছু কিছু পণ্যে দেওয়া হয়।

ইভ্যালি একটা মার্কেটপ্লেস। আমরা হয়তো বাইকে আজ ১০ হাজার টাকা লস করছি। কিন্তু আমরা অন্য একটি পণ্য যেমন টিভি বিক্রি করে ২ হাজার টাকা লাভ করছি। আমাদের এখানে অনেক পণ্য আছে যেগুলোতে কোনও ছাড় থাকে না। সেগুলো বিক্রি করে আমরা লাভ করছি। ওভারঅল লাভ ও ক্ষতি যখন হিসাব করা হয় তখন দেখা যায় লাভের পাল্লাই ভারি।

বাংলা ট্রিবিউন: অনেকেরই ইভ্যালি থেকে পণ্য প্রাপ্তি নিয়ে অভিযোগ আছে, অনেকদিন অপেক্ষা করতে হয়।

মোহাম্মদ রাসেল: পণ্য ডেলিভারি দিতে দেরি হওয়ার কারণটা আমাদের কাছে পরিষ্কার। আমরা যে সময়ের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দিই সেটাই ডেলিভারি ক্যাপাসিটি। ধরুন, আমরা এক হাজার মোটরবাইকের অর্ডার পেলাম। এই এক হাজার বাইক আমরা কোনও সময়ই ৭-১০ দিনে দিতে পারি না। এটা আমরা না, উৎপাদক কোম্পানিও পারে না। আমরা যে পরিমাণ ছাড় দিই সেই পরিমাণ ছাড়ে যদি আমরা ৫০টা বাইক বিক্রি করি তাহলে উৎপাদক কোম্পানি থেকে আমরা কোনও কমিশন বা সাবসিটি পাবো না। সুযোগ-সুবিধাগুলোও ঠিকমতো পাবো না। ক্রেতাদের বড় ছাড় দিতে গিয়ে আমাদেরও বড় আকারের অর্ডারগুলো নিতে হয়। বড় অর্ডার নেওয়ার পরে আমাদের মনে হয় আমরা পেরে যাবো কিন্তু তারপরও বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকে। সেজন্য কিছুটা সময় দেরি হয়। বাইকের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি।

মার্চেন্ডাইজারদের কাছ থেকেও সময় মতো পণ্য না পাওয়াও একটা কারণ। তারা অন্য অর্ডার রেখে আমাকে তো ডেলিভারি দেবে না। অন্য কোম্পানিকে যখন ১০টা দেবে তখন আমাদেরও ১০টা দেবে। এই পাইপলাইনে সমস্যা হওয়ায় একটু দেরি হয়ে যায় পণ্য ডেলিভারি দিতে। তবে আমরা ডেলিভারির সময় অনেক কমিয়ে এনেছি। শুধু গত মাস থেকে এই মাসে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের হার ৫০ ভাগ কমে গেছে। এটা আমাদের পর্যবেক্ষণ। আমরা এটাকে শূন্যতে নিয়ে আসব।

আলিবাবা অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হতে চায় ইভ্যালি

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীরা (অন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান) তো আপনার ওপর নাখোশ। অনেকের মন্তব্য, আপনি দেশের ই-কমার্স শিল্পকে ধ্বংস করে ফেলবেন। আপনার প্রতি তাদের এই বিরূপ ধারণা কেন?

মোহাম্মদ রাসেল: আমি জানি না। জানার ইচ্ছেও নেই। আমি আমার কাজ করছি, করে যাবো। তারা কি বলবে, কি করবে এটা তাদের ব্যাপার। আমি যেটা বুঝি, এখন ই-কমার্সে প্রতিদিন যত টাকার পণ্য বিক্রি হয় তার অর্ধেক হয় ইভ্যালি থেকে। বাকি টাকার দাবিদার অবশিষ্ট ই-কমার্সগুলোর। আমরা যে পরিমাণ বিক্রি করছি সেটা আর সবাই মিলেও করতে পারছে না। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টা স্বাভাবিকভাবেই চলে আসবে। তবে একেকজনের বিজনেস পলিসি একেকরকম। আমারটা যেমন অন্যদের সঙ্গে মিলবে না। আর বাজার নষ্ট করার অভিযোগ কিন্তু পুরনো। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। ভারতে জিও যখন ব্যবসা শুরু করে তখন সবাই অভিযোগের আ‍ঙুল তোলে। কিন্তু জিওর কিছু হয়নি। জিও তরতর করে সামনে এগিয়ে গেছে। বড় সংখ্যার গ্রাহক তৈরি করেছে। আমি দেখি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিডব্যাকটা কি? আমার কাজের ফলে দেশের ভালো হচ্ছে না খারাপ হচ্ছে সেটাই আমি দেখি। খারাপ হলে নিশ্চয়ই আমি এটা করতাম না।  

এই মার্কেটটা ৮ বছরের পুরনো। কি ছিল এই বাজারের অবস্থা? গত এক বছরে ই-কমার্সের ‘বেটার মার্কেট’ তৈরি হয়েছে। এই যে মার্কেট তৈরি হলো, এটা কি পুরো সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর নাকি লাভজনক সেটা দেখতে হবে। আমার জন্য অন্য ই-কমার্স উদ্যোক্তার যদি ক্ষতি হয় সেটা তো আমার দেখার কথা নয়। আমি তো বাজার ধরার চেষ্টা করবোই। কিন্তু আমার জন্য দেশের কোনও ক্ষতি হয়, উৎপাদনকারীদের যদি কোনও ক্ষতি হয়, ভোক্তাদের যদি কোনও ক্ষতি হয় তাহলে এটা সমস্যা হতে পারে বলে আমি মনে করি। আমরা দেশের পুরো ইনভেন্টরি ব্যয় কমিয়ে এনেছি, ইকোনমিক ইনভেন্টরি ব্যয় কমিয়ে এনেছি। আমরা জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখতে পারবো শুধু ইনভেন্টরি ব্যয় কমিয়ে আনার ফলে।

বাংলা ট্রিবিউন: ইভ্যালি কি স্থানীয় বিনিয়োগের কোম্পানি?

মোহাম্মদ রাসেল: আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু ফান্ড তৈরি করেছি। সেটা দিয়েই ইভ্যালি চলছে। ফলে এটাকে বলা যায় স্থানীয় কোম্পানি। আলিবাবার মতো বড় কোনও প্রতিষ্ঠান এখনও বিনিয়োগ করেনি। আমাদের সঙ্গে অনেক বড় কোম্পানির কথা হচ্ছে। বিদেশের নামকরা ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। শিগগিরই বিদেশি বড় কোনও কোম্পানি ইভ্যালির সঙ্গে যুক্ত হবে। আলিবাবা অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান হতে চায় ইভ্যালি।

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের ই-কমার্সের বয়স কিন্তু কম হলো না। এতদিনেও ক্রেতাদের মাঝে ই-কমার্স আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে পারলো না।

মোহাম্মদ রাসেল: ই-কমার্স বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে ২০১১ বা ২০১২ সালের দিকে। এখন প্রায় আট বছর এর বয়স। এই আট বছর একেবারে কম সময় নয়। এই আট বছরে অনেক কিছুই এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। আমাদের দেশে স্মার্টফোনের ব্যবহারকারী কম ছিল, ইন্টারনেটের গতি কম ছিল, ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের সক্ষমতা কম ছিল। ফলে এটার একটা প্রভাব এই শিল্পে ছিল। কিন্তু এখন তো এসব নেই। তাহলে? ধরা যাক, ৯৭ সালে মোবাইল ফোনের ব্যবহারকারী কত ছিল, ৯৮-তে কত ছিল, ৯৯-তে কত ছিল- এই গ্রোথটাকে আমরা বলি জিওম্যাট্রিক গ্রোথ। মানে যখন বাড়ে তখন এক থেকে দুই হয়, দুই থেকে চার হয়, চার থেকে আট হয়, আট থেকে ষোল হয়। ফলে গত আট বছরের গ্রোথের সঙ্গে পরের আট বছরের গ্রোথ ম্যাচ করবে না। আপনি যদি গত দুই বছরের (ইভ্যালি বাজারে আসার পরে) গ্রোথটা দেখেন, সেটা ইভ্যালি আসার পরে হয়েছে। প্রতিদিনই আমাদের নতুন নতুন ক্রেতা আসছে। আমরা প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছি এবং পুরনো সবাইকে ধরে রাখতে পারছি। আর আস্থার বিষয়টি পুরোপুরি অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অভিজ্ঞতা মানুষের একদিনে হয় না। বারবার সেবা নিতে নিতে হয়। তবে ই-কমার্সে ক্রেতাদের আস্থা আগের চেয়ে বেড়েছে।

বাংলা ট্রিবিউন: ই-কমার্সের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন ক্রেতা পাওয়ার চেয়ে পুরনোদের ধরে রাখা। এজন্য আপনারা কি করেন?

মোহাম্মদ রাসেল: ক্রেতারা যে পণ্য অর্ডার করেন তা যেন সঠিক সময়ে পান। এটা ঠিকঠাক হলে ক্রেতারা থেকে যাবেন। দেখা যায়, ১০টা অর্ডারের মধ্যে হয়তো তিনি দুটোতে খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। এটা খারাপ একটা প্রভাব ফেলে। এটাকে কমিয়ে একটায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। নিয়মিত ক্রেতাদের জন্য আমরা সেটা ‘জিরো’তে আনার চেষ্টা করছি। ক্রেতারা যেন আমাদের সেবায় সন্তুষ্ট থাকেন সেজন্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: ইভ্যালি ভবিষ্যৎ কি করতে চায়?

মোহাম্মদ রাসেল: আমাদের ই-খাতা নামে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি আসছে। ই-কমার্স বললে আপনারা অ্যামাজন বা আলিবাবা দেখেন, বোঝেন। আমরা চাই বাংলাদেশে এমন একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে। তারা যতগুলো প্ল্যাটফর্ম নিয়ে কাজ করে আমরাও ধীরে ধীরে ওই দিকেই এগোনোর চেষ্টা করছি।

বাংলা ট্রিবিউন: বাংলা ট্রিবিউনকে সময় দেওয়ার জন্যও অনেক অনেক ধন্যবাদ।

মোহাম্মদ রাসেল: আমাকেও ইভ্যালি নিয়ে কিছু বলার সুযোগ দেওয়ায় বাংলা ট্রিবিউনকে ধন্যবাদ। আশা করি ইভ্যালি নিয়ে একটা স্বচ্ছ ধারণা দিতে পেরেছি।

Rate this post